চৈত্রসংক্রান্তি সামনে রেখে রাতে গ্রামে ঘুরছে নীলসন্যাসীর দল
শরীয়তপুরের বিভিন্ন গ্রামে রাতে ঘুরে ঘুরে চৈত্রসংক্রান্তির নীলপূজা বা নীলষষ্ঠী পালন করছেন ভক্তরা। এটি বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। মূলত এটিকে নীল-নীলাবতী বা শিব-দুর্গার বিবাহ উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন দেব-দেবী সেজে ভক্তরা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিভিন্ন গ্রামে যাচ্ছেন। ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন বাড়ির উঠানে রাতে বাদ্যের তালে তালে নৃত্য পরিবেশ করছেন। এঁদের নীলসন্যাসী বলা হয়।
শরীয়তপুরের বিভিন্ন মন্দিরের ভক্তরা জানান, বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের গৃহবধূরা নিজের, স্বামীর ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় নীলষষ্ঠী পালন করেন। গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুরা এ উৎসব ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠে। গৃহস্থের উঠানে নীলসন্যাসীরা দাঁড়াতেই বাড়ির নারীরা ফুল ও বিভিন্ন ফল দিয়ে তাঁদের বরণ করে নেন।
নীলসন্যাসীরা শিব-দুর্গা, কালী-মহাদেব, রাধাকৃষ্ণসহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। প্রতিটি বাড়ি থেকে তাঁদের চাল, ডাল ও বিভিন্ন সবজি দেওয়া হচ্ছে। পয়লা বৈশাখের পর সংগ্রহ করা ওই চাল, ডাল ও সবজি দিয়ে মহোৎসবের আয়োজন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার অন্তত ১০টি মন্দিরের ভক্তরা নীলসন্যাসী সেজে বিভিন্ন গ্রামে যাচ্ছেন। গতকাল জেলা শহরের বিভিন্ন মহল্লার হিন্দুদের বাড়িতে যান পাটানিগাঁও গ্রামের নীলসন্যাসীরা। তাঁরা রাত আটটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বিভিন্ন বাড়িতে শিবের গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
ওই নীলসন্যাসী দলের পরিচালক স্বপন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার কিশোর ও তরুণেরা নীলসন্যাসী সাজে। প্রতিবছর আমরা চৈত্রসংক্রান্তির আগের তিন দিন গ্রামে গ্রামে নীলপূজা করি। আমরা প্রত্যেকেই কর্মজীবী। তারপরও প্রতিবছর এ তিন দিন কোনো কাজ না করে ধর্মীয় এ নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করি। নতুন প্রজন্ম যাতে বাঙালির চিরাচরিত এ উৎসব ভুলে না যায়, তার জন্য তরুণ ও কিশোরদের এ উৎসবে শামিল করি।’
শহরের পালং এলাকার গৃহবধূ রাত্রি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নীলষষ্ঠী উপলক্ষে প্রতিবছরই উপবাস করি। সারা বছরই অপেক্ষা করে থাকি, কখন নীলসন্যাসীর দল গ্রামে আসবে। আর আমরা স্বামী, সন্তান ও পরিবারের জন্য মঙ্গল কামনা করে পূজায় শামিল হব।’
শরীয়তপুরের জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরের নির্বাহী কমিটির সভাপতি অনিক ঘটক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বছরের সব ভুলভ্রান্তি ও গ্লানি ভুলে আমরা নতুন বছরকে বরণ করি। চৈত্রসংক্রান্তি আমাদের বাঙালিদের আবহমানকালের সংস্কৃতি। গ্রামে আগে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চৈত্রসংক্রান্তি উদ্যাপন করা হতো। কালের বিবর্তনে এখন তা শুধুই স্মৃতি। এখন শুধু নীলষষ্ঠীর মধ্যেই আমরা ওই উৎসবের আমেজ খুঁজে পাই।’