প্রধানমন্ত্রীর স্বজন নিয়ে মন্তব্য, যশোরে যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কার
প্রধানমন্ত্রীর স্বজন নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করায় যশোর সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ারকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁকে বহিষ্কারের কথা জানায়। বিষয়টি যশোর জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ফাতেমা আনোয়ারের মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশপত্র পাঠান।
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডেইজি সারোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা (লিলি) স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে, সংগঠনবিরোধী ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে যশোর জেলার অন্তর্গত সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ফাতেমা আনোয়ারকে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।’
গতকাল শুক্রবার যশোর জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদারের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যশোর সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ও আসন্ন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর স্বজন নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর স্বামী জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং একই পরিবার থেকে একাধিক দল করতেই পারেন। তাঁর এ বক্তব্যের বিষয়টি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁকে যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পদ, প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ কেন্দ্রের কাছে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর সুপারিশ করেন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফাতেমা আনোয়ারের স্বামী আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙ্গে লিটন পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি। তিনি খুন-গুম, মাদক, সোনা, অস্ত্র চোরাচালানসহ একাধিক অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে পলাতক অবস্থায় আছেন। দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। তিনি ইন্টারপোলেরও ‘ওয়ান্টেড’ আসামি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফাতেমা আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীর স্বজন নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য করেছেন। তাঁর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে দলীয় মনোভাববিরোধী মত প্রকাশ করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পদ, প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ কেন্দ্রের কাছে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বহিষ্কৃত ফাতেমা আনোয়ার বলেন, ‘রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা একজন নাগরিকের অধিকার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উদাহরণ হিসেবে কথাটি বলেছিলাম। এটা বলে আমি কোনো অন্যায় করিনি। এখন চাটুকারদের রাজনীতি চলছে। তারই অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। ফাতেমা আনোয়ার কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যশোর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার যুবলীগের নেতা তৌহিদ চাকলাদারকে সমর্থন দিয়েছেন। শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই তৌহিদ। অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন।