বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। দুই মাস আগে মারা গেছেন। টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন প্রীতি শীল (২০)। পাশাপাশি সংসারের বোঝা এখন তাঁর কাঁধে। গত রোববার সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন প্রীতি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তাঁর চিকিৎসার ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
প্রীতি শীল শরীয়তপুর জেলা শহরের নিরালা আবাসিক এলাকার মৃত বিমল শীলের মেয়ে। তিনি মাদারীপুর সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিমল শীল চার-পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। দুই মাস আগে তিনি মারা যান। বাবার চিকিৎসা ব্যয়, পরিবারের খরচ, ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ বহনের ভার পড়ে প্রীতির ওপর। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি টিউশনি করে পরিবারের ওই খরচ বহন করতেন। সম্প্রতি তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বিল সহকারী পদে চাকরি শুরু করেন। রোববার কর্মস্থল নড়িয়ায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। মাথায় গুরুতর আঘাত পান। শরীয়তপুরের সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রীর আঘাত ছিল গুরুতর। তাঁকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রীতির ভাই প্রীতম শীল বলেন, ‘বাবা নেই। দিদিই আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। আমাদের টাকাপয়সা নেই। কীভাবে তাঁর চিকিৎসা করাব, বুঝতে পারছি না। আমাদের পাশে থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।’
প্রীতম বোনের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনসহ বেশ কিছু সংগঠন প্রীতির চিকিৎসার জন্য আর্থিকভাবে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রীতি শীলের চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি অমিত ঘটক চৌধুরী বলেন, ‘প্রীতির দুর্ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তাঁর পরিবারের পাশে থাকতে চাই। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা মেয়েটির চিকিৎসার সহায়তায় এগিয়ে আসুক। তাঁর চিকিৎসায় অনেক অর্থের প্রয়োজন। সমাজের মানুষ এগিয়ে এলে মেয়েটির উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।’
জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত কলেজছাত্রীর পাশে আমরা আছি। সবার প্রচেষ্টায় তাঁর চিকিৎসা চলবে। প্রাথমিকভাবে আমরা সহায়তা করেছি। প্রয়োজনে আরও সহায়তা করা হবে।’