কুলিয়ারচরে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়িতে ফেরার পথে চালক এবং সহযোগীর বিরুদ্ধে এক কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে অটোরিকশা এবং মেয়েটির ব্যবহৃত মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার দুজনকে আজ শুক্রবার দুপুরে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।
গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি হলেন কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাহ আলম (২৮) ও ভৈরব উপজেলার আকবরনগর গ্রামের জহির মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া (২২)। কামালকে আজ সকাল ১০টার দিকে কুলিয়ারচরের বরখারচর বাজার থেকে এবং শাহ আলমকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘দুর্জয় ভৈরব’ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহ আলমের কাছ থেকে অটোরিকশা উদ্ধার হয়। মুঠোফোন পাওয়া যায় তানভির মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। মুঠোফোনটি কোনো এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তানভির।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন, গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দুজনের মধ্যে শাহ আলম অটোরিকশাচালক। ঘটনার রাতে শাহ আলম অটোরিকশা চালাচ্ছিলেন। কামাল হলেন শাহ আলমের ঘনিষ্ঠ। শাহ আলম মূলত ভৈরব থেকে কুলিয়ারচরের আগরপুর পর্যন্ত অটোরিকশা চালান। ঘটনার রাতে মেয়েটিকে দেখার পর তাঁর মনে কুচিন্তা আসে। ওই ভাবনা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে রাজি হন এবং স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে অসুস্থ হওয়ার নাটক সাজান। দলবদ্ধ ধর্ষণের ভাবনা থেকে কামালকে ফোন করে অটোরিকশায় ওঠান শাহ আলম।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটি বরিশালের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরে। বাড়িতে ফেরার জন্য গত বুধবার বেলা দুইটার সময় বরিশাল থেকে ঢাকার বাসে ওঠেন। ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান রাত ৯টায়। সোয়া ৯টায় সায়েদাবাদ থেকে ভৈরবের বাসে ওঠেন। ভৈরব পৌঁছান রাত ১২টায়। ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার বাস না থাকায় মেয়েটি একটি অটোরিকশায় ওঠেন। অটোরিকশায় তিনজন পুরুষ ও একজন নারী যাত্রী ছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর চালক ফোন করে তাঁর এক সহযোগীকে গাড়িতে ওঠান।
লম্বা ভ্রমণের কারণে ক্লান্ত ছিলেন ওই শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে চলন্ত অটোরিকশায় ঘুমিয়ে পড়েন, কখন ওই অটোরিকশায় থাকা অন্য যাত্রীরা নেমে পড়েছেন বুঝতে পারেননি। ঘুম থেকে জেগে দেখেন ওই অটোরিকশায় কেবল চালক আর তাঁর সহযোগী। রাত পৌনে দুইটার দিকে চালক জানান, তাঁর বাড়ি সামনে, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। স্ত্রীকেও কিশোরগঞ্জে নিয়ে যেতে হবে। এসব কথা বলে কুলিয়ারচরের কলাকুপার চম্পাকান্দা এলাকায় অটোরিকশাটি থামিয়ে মেয়েটিকে একটি বাঁশঝাড়ের কাছে নিয়ে যান চালক ও তাঁর সহযোগী। সেখানে নিয়ে মেয়েটিকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পরে তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোন ও টাকা কেড়ে নেওয়া হয়।
নিরুপায় মেয়েটি গভীর রাতে একা একা হেঁটে সামনে এগোচ্ছিলেন। এই সময় এক পথচারীর সঙ্গে দেখা হয়। মেয়েটির কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। পরে পুলিশ এসে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার মেয়েটির করা ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় চালক ও সহযোগীকে আসামি করে কুলিয়ারচর থানায় দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটি।