‘পুলিশ কেন আমার ছেলেকে এতিম করল?’

দুই বছর বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে আহাজারি করছেন নিহত ছাত্রদল নেতা নয়নের স্ত্রী সাজিদা আক্তার। রোববার দুপুরে উপজেলার চরশিবপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল শনিবার দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন নয়ন। স্ত্রীর জিজ্ঞাসায় জানিয়েছিলেন বিএনপির কর্মসূচিতে যাবেন। বাবার বাইরে যাওয়া দেখে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দুই বছর বয়সী ছেলে আলিফ। বাইরে থেকে জুস আর খাবার নিয়ে আসবেন বলে ছেলেকে কোলে নিয়ে শান্ত করেন নয়ন। কিন্তু শিশু আলিফের অপেক্ষা আর বাবা নয়নের ছেলের জন্য জুস নিয়ে বাড়ি ফেরা আর হলো না।

আজ রোববার দুপুরে নিহত নয়নের স্ত্রী সাজিদা আক্তার বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন। বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রচারপত্র বিতরণের সময় গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া (২৬) নিহত হন।

আরও পড়ুন

নয়ন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবচর গ্রামের রহমত উল্লাহর ছেলে। এক বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে নয়ন ভাইদের মধ্যে বড়। তিনি সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি ও চরশিবপুর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

বছর পাঁচেক আগে একই ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে সাজিদা আক্তারকে বিয়ে করেন নয়ন। আলিফ নামে তাঁদের একটি ছেলে আছে। নয়ন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গতকাল তাঁর সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মসূচির কারণে তিনি কালীগঞ্জে যাননি।

নিহত ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

দুপুরে চরশিবপুর গ্রামে নয়নের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রী সাজিদা আহাজারি করছেন। কোলে তাঁর দুই বছর বয়সী আলিফ। কিছু বুঝতে না পারলেও মায়ের কান্না দেখে সে–ও কাঁদছিল। সাজিদার মা–বাবাসহ স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীকেও নয়নের শ্বশুরবাড়িতে দেখা গেছে।

সাজিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় জানালেন, বিএনপির কর্মসূচিতে যাবেন। বাবার বাইরে যাওয়া দেখে ছেলে আলিফ তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে। বাইরে থেকে জুস ও খাবার আনার কথা বলে ছেলেকে শান্ত করেন। বিকেলে সাজিদা জানতে পারেন, পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন স্বামী নয়ন মিয়া।

আরও পড়ুন

গৃহবধূ সাজিদা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘পুলিশ আমার স্বামীর পেটে গুলি করেছে। ঢাকায় নেওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায়। এখন আমার কী হবে? আমার ছেলের কী হবে? পুলিশ কি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে পারবে? পুলিশ কেন আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করল? আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমার ছেলেকে এতিম করার বিচার চাই।’

গতকাল বিকেলে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে গণসমাবেশের প্রচারপত্র বিতরণ শেষে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে নয়ন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।

সংঘর্ষে পুলিশ আহতের ঘটনায় উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করে গতকাল রাতে মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল আটক দুজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে নিহত নয়নের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।