কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধে প্রক্টরিয়াল বডির ১০ নির্দেশনা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে প্রক্টরিয়াল বডি। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম ও চারজন সহকারী প্রক্টর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমেরই অনুমতি দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, ক্রীড়া ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত যেকোনো আয়োজন করতে প্রক্টরিয়াল বডিকে লিখিতভাবে জানিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যেকোনো অনুষ্ঠান করার জন্য হল কর্তৃপক্ষের (প্রভোস্ট, হাউস টিউটর) অনুমতি সাপেক্ষে প্রক্টরিয়াল বডিকে জানাতে হবে। হলসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় হল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমাধান না হলে প্রভোস্টের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। নিজ বিভাগে কোনো সংকট ও সমস্যা বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধান করতে হবে। সমাধান সম্ভব না হলে ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো পর্যায়ে, যে কারও দ্বারা যৌন হয়রানি, ইভ টিজিং, বডি শেমিংয়ের শিকার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে’ লিখিত অভিযোগ করতে হবে। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ও মেডিকেল সার্ভিস সম্পর্কিত (যেমন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য) বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চাকরিপ্রার্থী কিংবা কোনো চাকরিজীবীর বিষয়ে অভিযোগ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ–সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনে যোগাযোগ করতে হবে। পরীক্ষাসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। ক্যাম্পাসে ‘মব জাস্টিস’, যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেখলে কিংবা সংঘটিত হলে বা হওয়ার আশঙ্কা দেখলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমকে দ্রুত জানাতে হবে।
জানতে চাইলে প্রক্টর আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে কাজ শুরু করেছি। আমরা একটি নিরাপদ ও সুন্দর ক্যাম্পাস চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করছি শিক্ষার্থীরাসহ সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে আমাদের সহায়তা করবেন।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিকসহ সার্বিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। উপাচার্য থেকে শুরু করে সহ–উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেন। ২২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরদিন গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল হাকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান।