পঞ্চগড়ে থমথমে পরিস্থিতি, চলছে আহমদিয়াদের জলসা বন্ধের মাইকিং
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষ থেমেছে। বিক্ষোভকারীদের হামলায় বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শহরের বেশির ভাগ জায়গায় রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে বিক্ষোভ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে শহরে এখনো পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব টহল দিচ্ছে। রাত ১০টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। এদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা অনিবার্য কারণবশত বন্ধ করা হয়েছে বলে শহরে মাইকিং করছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। মাইকিংয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান (২৩) নামে এক তরুণ মারা গেছে বলে জানা গেছে। তিনি নাটোরের বনপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বিক্ষোভকারীরা তাঁকে ট্রেনে হিচরে করতোয়া নদীর ধারে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধূরী।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দুইজন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শহরের চৌরঙ্গী মোড়, ধাক্কামারা, জালাসী, এমআর কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলছে। তবে সাধারণ মানুষ এখনো আতঙ্কিত। শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। শহরবাসীর অনেকেই মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করছেন। বাইরে থেকে অনেকে বাড়ির পথে ছুটছেন।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হামলায় তাঁদের সম্প্রদায়ের ২০ থেকে ২৫টি বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। তাঁদের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
এর আগে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) নামের এক তরুণ নিহত হন। এ সময় পুলিশের ৯ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বেলা দুইটার পর শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলেও তাঁদের সংখ্যা জানা যায়নি।
নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সংঘর্ষের সময় তিনি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বলে তাঁর স্বজনেরা দাবি করেছেন।
সংঘর্ষ চলাকালে শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ২০-২৫টি বাড়িঘর ও জেলা শহরের চারটি দোকানের মালামাল বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের করতোয়া সেতুসংলগ্ন ট্রাফিক পুলিশের একটি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় শহরের মূল প্রবেশপথ করতোয়া সেতুর মাঝখানে বিক্ষোভকারীরা বাঁশ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পথচারীদের চলাচল শুরু হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ধাক্কামারা এলাকায় পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কেউ মারা যাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।