বগুড়ায় নাশকতার মামলা
দুই শিশুর ‘রেসকিউ বোট’ ভাঙচুরের সত্যতা পাওয়া যায়নি, পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ১১ ও ১২ বছর বয়সী দুই শিশুর বিরুদ্ধে সরকারি দুটি ‘রেসকিউ বোট’ ভাঙচুরের অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ। নাশকতার অভিযোগে করা সেই বিতর্কিত দুটি মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
২৫ দিন তদন্ত শেষে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আজ সোমবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সারিয়াকান্দির আমলি আদালত) দুটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সারিয়াকান্দি থানার উপপরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এজাহারে বাদীর করা অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় দুটি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
গত ৩১ জুলাই দুপুরের দিকে ওই দুই শিশু সারিয়াকান্দি সদরের কালীতলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন বাগবেড় এলাকায় যমুনা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল। তখন আবদুল মোমিন নামের এক তরুণ তাদের রেসকিউ বোটে ডাকেন। বোটে বসে গল্প করার সময় ওই তরুণ অসাবধানতাবশত বোটের বেসিনে থাকা কাচ ভাঙচুর করেন। এ সময় চালকেরা তিনজনকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে নেন। ইউএনও তৌহিদুর রহমান আটক দুই শিশুকে থানায় সোপর্দ করেন। পরে ইউএনওর নির্দেশে বোটের কাচ ভাঙচুরের ঘটনায় দুই চালক বিশেষ ক্ষমতা আইনে সারিয়াকান্দি থানায় দুটি মামলা করেন।
১ আগস্ট দুই শিশুসহ তিনজনকে দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ গ্রেপ্তার দুই শিশুকে হাজির করার পর বিচারক বগুড়া কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দুই শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি আবদুল মোমিনকে (২২) বগুড়া কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দুই শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে না পাঠিয়ে বগুড়া কারাগারেই সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল। জামিন পেয়ে ৭ আগস্ট বগুড়া কারাগার থেকে মুক্ত হয় ওই দুই শিশু।
দুটি মামলায় দুই শিশুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিন্ন অভিযোগ করা হয়। অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়। দুটি মামলার বাদী দুই বোটের চালক। একটি মামলার বাদী ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশেই মামলার বাদী হতে হয়েছে।
ইউএনও তৌহিদুর রহমান ওই সময় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া নাশকতার অংশ এটি। এ জন্য দুই শিশুর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আলাদা দুটি মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ ও দুই শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারিয়াকান্দির একটি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ওই দুই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। সারিয়াকান্দিতে কোনো ছাত্র আন্দোলনও হয়নি। অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার কারণে নির্দোষ দুই শিশুকে বিনা দোষে আট দিন কারাভোগ করতে হলো।