রাজশাহী ওয়াসার সেবার মান নিয়ে বেশির ভাগ গ্রাহক অসন্তুষ্ট: সামাজিক নিরীক্ষার তথ্য

রাজশাহী ওয়াসার পানি ও পয়োনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার সকালেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী ওয়াসার পানি ও পয়োনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে সামাজিক নিরীক্ষা। এতে উঠে এসেছে রাজশাহী ওয়াসার সেবার মান নিয়ে গ্রাহক অসন্তুষ্টির কথা। সামাজিক নিরীক্ষার তথ্য, বিশ্লেষণ ও সুপারিশের আলোকে আজ বুধবার বেলা ১১টায় নগরের হোটেল ওয়ারিশানে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এলাকায় পরিচালিত গণশুনানিতে ফলাফল উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা আহমেদ বোরহান।

সামাজিক নিরীক্ষায় ওয়াসার গ্রাহক সন্তুষ্টির মাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ০২ শতাংশ, সেখানে অসন্তুষ্টির মাত্রা ছিল ৫৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেবা প্রাপ্তির জন্য টাকা দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৫১ দশমিক ১১ শতাংশ গ্রাহক। ৫৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ গ্রাহক জানেন না যে ওয়াসার সেবা বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা মতামত জানানোর মাধ্যম রয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডের ১০টিতে সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। পানি ও পয়োনিষ্কাশন সেবা প্রদানকারী সংস্থা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনের ওয়াসার গ্রহীতাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রের আলোকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ১০টি ওয়ার্ডের ৫টিতে (২, ৩, ৫, ৬ ও ১৯) সচেতনতা প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়। অন্য পাঁচটি ওয়ার্ড থেকে (১, ৪, ৭, ৯ ও ১১) নমুনা নেওয়া হয়েছে। সেবা প্রদানকারী ও সেবাগ্রহীতা উভয়ই উত্তরদাতা ছিলেন এবং পানি ও পয়োনিষ্কাশন–সংক্রান্ত সেবা কার্যক্রমে তাঁদের উপলব্ধি এবং অভিজ্ঞতাকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ২০০ সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতাকে এ সমীক্ষায় সম্পৃক্ত করা হয়।

গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল্লা হাফিজ। অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা সেলিম রেজা এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সুশাসন, অধিকার ও ন্যায্যতা কর্মসূচির উপপরিচালক কানিজ ফাতেমা। সঞ্চালনা করেন বেসরকারি সংস্থা বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী।

নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শফিকুল আলম বলেন, তাঁর তৃতীয় তলার বাসায় ওয়াসার সংযোগ রয়েছে। এ জন্য আগে বিল দিতে হতো ২ হাজার ১০০ টাকা। এখন বিল বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ তাঁর পাশের বাসার গ্রাহক কোনো বিলই দেন না। তিনি দাবি করেন, ওই ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০ অবৈধ সংযোগ রয়েছে। ওয়াসা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তিনি বলেন, তাঁর এলাকায় শুক্র-শনিবার বিদ্যুতের একটু সমস্যা থাকে। যখন বিদ্যুৎ আসে, তখন ট্যাপ খুললে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসে, ওই পানি ব্যবহার করা যায় না।

উপস্থিত অতিথিরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রাজশাহীর পানিতে ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন রয়েছে। যেহেতু এখনো পর্যন্ত মাটির নিচ থেকে প্রাকৃতিক পানি উঠানো হচ্ছে। তাই এই দুটি উপাদানের কারণে পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। তাঁরা গ্রাহকদের নিজের বাড়ির পাইপলাইন পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেন। এছাড়া আগামী ২০২৭ সালে গোদাগাড়ীতে যে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে, সেখান থেকে পানি পাওয়া যাবে। তখন এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপাতত ওয়াসার লোকবল কম। আর অবৈধ সংযোগের বিষয়টি তাঁরা জানেন। আপাতত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে তাঁরা কঠোর হতে পারছেন না।