সিলেটে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ
‘সরকারের ব্যর্থতা ও ক্রমাগত উসকানিতে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষে দেশজুড়ে হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে সরকারই দায়ী। সরকারের ব্যর্থতা, ক্রমাগত উসকানি ও নৃশংসতার কারণেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
আজ বুধবার বিকেল ৪টায় নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘সরকারি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে সিলেট’ শীর্ষক এ কর্মসূচি যৌথভাবে পালন করেছে ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’, ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ ও ‘নগরনাট’ নামের তিনটি সংগঠন। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ১০০ মানুষ যোগ দেন।
ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে নগরনাটের শিল্পীদের প্রতিবাদী গণসংগীত পরিবেশনায় শহীদ মিনারের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি নগরের জিন্দাবাজার এলাকার নজরুল একাডেমির সামনে দিয়ে পুনরায় শহীদ মিনারের সামনে মিলিত হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
বক্তারা বলেন, সরকার প্রথমে শিক্ষার্থীদের মনোভাব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরে একের পর এক উসকানি দিয়েছে। এরপর সরকার সহিংস আচরণ করেছে। সরকারের ব্যর্থতা, উসকানি ও নৃশংসতার কারণেই দেশজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র বিক্ষোভ দমনের নামে দেশে স্মরণকালের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে, যা সবার মানবিক চেতনাকে ক্ষুব্ধ করেছে। মানুষ হিসেবে সবার হৃদয়ে এখন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রতিটি হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম। এ সময় সূচনা বক্তব্য দেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী। কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা রহমান, ঐতিহ্য প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ ট্রাস্টের সভাপতি শাহ জামান চৌধুরী, আইনজীবী সৈয়দা শিরিন আক্তার, আনসার খান ও হুমায়ূন রশীদ, বাম রাজনীতিবিদ উজ্জল রায়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মনির হেলাল, দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরার সমন্বয়ক দেবাশীষ দেবু, স্থপতি প্রসেনজিৎ রুদ্র, রেজাউল করিম, মুখলেছুর রহমান, যুবনেতা মতিউর রহমান, সহিদুজ্জামান পাপলু, শিল্পী অরূপ বাউল ও উজ্জ্বল চক্রবর্তী, আইনজীবী অরূপ শ্যাম বাপ্পী, নাট্যসংগঠক নাহিদ পারভেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান
ছাত্র-জনতা হত্যার দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ সিলেট জেলা শাখা। আজ বিকেল ৪টায় নগরের চৌহাট্টা এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ শেষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে কালো পতাকা মিছিল বের করা হয়।
বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির আহমদ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জেলার আহ্বায়ক সিরাজ আহমদ, সিপিবি সিলেটের সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, বাসদ জেলা আহ্বায়ক আবু জাফর, সাম্যবাদী আন্দোলনের সংগঠক মহীতোষ দেব ও বাসদ (মার্কসবাদী) জেলার সদস্য সঞ্জয় কান্ত দাশ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারা দেশে অব্যাহতভাবে গ্রেপ্তার-গণগ্রেপ্তার ও দমন-পীড়ন–নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। গণগ্রেপ্তার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতার মসনদ রক্ষা করতে চাইছে। দমন-নির্যাতন করে অতীতে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, বর্তমান সরকারেরও শেষ রক্ষা হবে না।
গণগ্রেপ্তারে সরকারের প্রতি গণ–অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। তাঁরা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকার পদত্যাগ করা না পর্যন্ত ছাত্র-জনতাকে রাজপথে থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।