ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। এ সময় এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবার যানগুলো অবরোধের আওতামুক্ত থাকে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লিওনসহ গ্রেপ্তার সব শিক্ষার্থীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি এবং অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটায় ওই এলাকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী সার্ভিস লেনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ইসলামপুর এলাকা ঘুরে নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের লেন দিয়ে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে কিছু সময়ের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের কলাভবন এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলাভবন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক এবং সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতু বলেন, গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল, লিওনসহ সব শিক্ষার্থীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া না হলে এবং আজকের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায় না হলে আগামীকাল রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনে যাবেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলগুলো খুলে না দেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তাঁদের করণীয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন । এ সময় এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনের সঙ্গে দেশের সব পেশাজীবী মানুষ যুক্ত হয়েছে। আমরা সমন্বয়কেরা মূলত ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু সাধারণ জনতার যে চাহিদা বা দাবি, সেটা হচ্ছে এক দফা দাবি। আমরা শাসকগোষ্ঠীকে হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আমরা যতই ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করি না কেন, সাধারণ জনতা কিন্তু আপনাদের চায় না, সেটা বুঝে নেবেন। অতএব আপনি সরকারের যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সেই মূল্যবোধে ফিরে আসুন। নইলে আমরা আপনাকে গদি থেকে ফেলে দিতে আর দুইবারও বিবেচনা করব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না করা হবে, তত দিন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকেরা চুপ থাকতে পারি না। গতকালও উত্তরা, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি করা হয়েছে। দেশের সব মানুষকে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সোচ্চার হোন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর যে ম্যাসাকার হয়েছে, এটা বন্ধ করার জন্য তৎপর হোন।’

বেলা দুইটার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। এতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফের যান চলাচল শুরু হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ফিরে শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।