রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টিতে আওয়ামী লীগের জয়
বিএনপির বহিষ্কৃত ১১ নেতা-কর্মীর মধ্যেও ৫ জন কাউন্সিলর পদে জিতেছেন। তবে জামায়াতের সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সবাই হেরে গেছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের ২৩টিতেই পুরোনো কাউন্সিলররা জয়ী হয়েছেন। আর জয়ী কাউন্সিলদের মধ্যে ২২ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা। ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে জয়ী হয়েছেন একজন।
অন্যদিকে বিএনপির বহিষ্কৃত ১১ নেতা-কর্মীর মধ্যেও ৫ জন কাউন্সিলর পদে জিতেছেন। তবে জামায়াতের সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সবাই হেরে গেছেন। গতকাল বুধবার রাতে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল জানা গেছে।
এদিকে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন। তাঁদের একজন বিএনপির পরিবারের সদস্য ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান। তিনি দলে সক্রিয় নন। আরেকজন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য শহিদুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে চলাফেরা করেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে বিএনপি থেকে যাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেই তালিকায় শহিদুল ইসলামের নাম ছিল না।
নতুন যে সাতজন কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন, তাঁরা হলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আলিফ আল মাহমুদ ওরফে লুকেন। তিনি বোয়ালিয়া থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি তাঁর চাচা বর্তমান কাউন্সিলর তরিকুল আলমকে হারিয়েছেন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন নগরের মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন। তিনি আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলরকে পরাজিত করেছেন। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহের হোসেন ওরফে সুজা, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ কর্মী মনিরুজ্জামান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা জানে আলম ওরফে জনী ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা আবু বক্কর ওরফে কিনু।
এবার নির্বাচনে দুটি ওয়ার্ড আলোচিত ছিল। এর একটি ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শাহ মখদুম থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক ওরফে সুমন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন। এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ছুরিকাঘাতের ঘটনা, মোটরসাইকেল ও কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়। এর পর থেকে ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন ছিল।
আলোচিত অন্যটি হচ্ছে ৭ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের প্রার্থী ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব মৈত্রীর নেতা মতিউর রহমান। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থক জহিরুল ইসলাম। এই জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মতিউর রহমান আচরণবিধি ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ করেছেন। নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছিলেন। এরপরও মতিউর রহমানের মিছিলে ককটেল হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাল্টা অভিযোগ এনে জহিরুল ইসলাম থানা ঘেরাও করেছিলেন। এ নিয়ে ওই ওয়ার্ডে ব্যাপক উত্তেজনা ছিল। তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর যাঁরা পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে রজব আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কামাল হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কামরুজ্জামান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নূরুজ্জামান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাসেল জামান, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আব্বাস আলী সরদার, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সরিফুল ইসলাম, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল মমিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে শাহাদাত আলী, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রবিউল ইসলাম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত), ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নিযাম উল আযীম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল হামিদ সরকার, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাহতাব হোসেন চৌধুরী ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরমান আলী।
বিএনপির ওয়ার্ড কাউন্সিলর যাঁরা পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা হলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির নেতা আবদুস সোবহান ওরফে লিটন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক যুবদল নেতা বেলাল আহম্মেদ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির নেতা আশরাফুল হোসেন ওরফে বাচ্চু।
গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে কাউন্সলর পদের ফলাফল পাওয়া যায়নি।
আগের কাউন্সিলরদের জয়লাভের ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় নির্বাচিত হওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। তাঁরা ভোটারদের অনেক সুযোগ–সুবিধা দিয়েছেন। নতুন প্রার্থীদের সেই সুযোগ কম থাকে। নিজ উদ্যোগে যাঁরা সেবামূলক কাজ করেছেন, যাঁরা মানুষের পাশে ছিলেন, তাঁরা অল্প হলেও নির্বাচিত হয়েছেন।