নাচ-গান-আড্ডায় কেটে গেল দিনটি
সবাই চাকরি, ব্যবসাসহ নানা কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত। ব্যস্ততার কারণে বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই। আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত আছেন। তবে শনিবার তাঁদের আবার সামনা-সামনি দেখা হলো, চিরচেনা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণেই।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দুধকুমার নদের পূর্ব পাড়ের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদারগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে। এরপর ১৯৬৭ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম প্রাক্তন নয় শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো পুনর্মিলনী। পুনর্মিলনীতে এসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই রঙিন স্কুলজীবনে। তাঁরা হাতে হাত ধরে নাচে-গানে বিদ্যালয়ের মাঠকে মুখরিত করেন। আড্ডায় কেটে যায় পুরো দিন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে পুনর্মিলনী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র মণ্ডল। আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে বিদ্যালয় মাঠে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে টি-শার্ট ও সকালের নাশতা খান। সকাল সাড়ে নয়টায় প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-অতিথিদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক প্রফুল্ল চন্দ্র মণ্ডল।
পরে শিক্ষার্থীরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষ করে স্মৃতিচারণা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্নেল রেজাউল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলমগীর বাদশা, চিকিৎসক আবদুস সামাদ ও চিকিৎসক নুরনবী আনসারী এবং অধ্যাপক সহিদুল ইসলাম, ফেরদৌস আহমেদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন সন্ধ্যা পাঠক। তিনি বলেন, ‘পুনর্মিলনীতে এসে বিদ্যালয়ে পড়ার সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার আগে বিদায়বেলায় সহপাঠীদের বলেছিলাম, আবার দেখা হবে। কিন্তু অনেকের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। পুনর্মিলনীতে এসে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। কেউ কেউ নাতি-নাতনির হাত ধরে অনুষ্ঠানে এসেছে। দেখেই ভালো লাগছে।’
২০১১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার পর কলেজে পড়তে বন্ধুরা একেকজন একেক জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। আজ পুনর্মিলনীতে এসে একত্র হয়ে ভালো লাগছে। স্কুলের স্যারদের আন্তরিকতা ও বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে আজ আবারও স্কুলজীবনের স্মৃতিতে ফিরে গেছি।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ১৯৭৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইয়াছিন আলী সরকার বলেন, ‘কর্মজীবনের ব্যস্ততার কারণে দীর্ঘদিন কারও সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ নেই। দিনদিন পরিচিত মুখগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল। বহু বছর পর বিদ্যালয়ের পরিচিত মুখগুলো একসঙ্গে হলাম। এখানে এসে স্কুলজীবনের কথা খুব মনে পড়ছে।’
পুনর্মিলনী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ১৯৬২ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে পুনর্মিলনী হয়নি। ইতিমধ্যে এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এবারেই প্রথম নয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হলো। তাঁদের বিদ্যালয়টি পূর্ব দুধকুমার নদের ওপারের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ। অথচ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠাগার নেই। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ে একটি পাঠাগার করা হবে। এ ছাড়া একটি তহবিল গঠন করা হবে, যা মাদারগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যয় করা হবে।