পঞ্চগড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, বিপর্যস্ত জনজীবন
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চলতি শীত মৌসুমে প্রথমবারের মতো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। জেলার তেঁতুলিয়ায় টানা তিন দিন ধরে সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন। সকাল ১০টার পর সূর্য উঁকি দিলেও রোদের উত্তাপ না ছড়াতে পারায় অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও সিলেটের শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গেল বছরের একই দিনে (২০২২ সালের ১ জানুয়ারি) তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, কোনো এলাকার তাপমাত্রা যদি ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে টানা তিন দিন অবস্থান করে, তাহলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এবার পৌষের শুরু থেকেই উত্তরে শীত জেঁকে বসতে শুরু করলেও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়নি। চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, টানা তিন দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই মৌসুমে প্রথমবারের মতো এ এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য উঠলেও আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাস থাকায় রোদের তীব্রতা নেই। এ জন্য প্রায় সারা দিনই শীত অনুভূত হবে। এখন থেকে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে তিনি জানান।
এদিকে বেশ কয়েক দিন ধরেই পঞ্চগড়ের তাপমাত্রার পারদ নেমে যাচ্ছিল। চারদিক ঢেকে যায় ঘন কুয়াশায়। অনুভূত হতে শুরু করে হাড়কাঁপানো শীত। রাতের বেলা বৃষ্টির মতো টিপটিপ ঝরতে থাকে কুয়াশা। তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ। আজ সকালেও ঘন কুয়াশায় জেলার সড়কগুলোয় যানবাহন চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়েন চালকেরা। দুর্ঘটনা এড়াতে যানচালকদের হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যায়।
সকালে জেলা শহরসংলগ্ন করতোয়া নদীতে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করা কিশোর মেহেদী হাসান (১৩) বলে, ‘মা-বাবার সঙ্গে আমরাও প্রায় প্রতিদিন নদী থেকে পাথর তুলি। নদীর ঠান্ডা পানিতে পাথর তুলতে অনেক কষ্ট হয়। তারপরও অভাবের কারণে তুলতে হয়। আজকে ঠান্ডা বেশি হওয়ায় পানিতে নামার পর শরীর কাঁপছে। এ জন্য হয়তো বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।’
শহরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আবদুস সাত্তার (৪০) বলেন, কয়েক দিন ধরে খুবই ঠান্ডা পড়েছে। সকালে কুয়াশার কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না। হেডলাইট ছাড়া রাস্তায় দূরের কিছু দেখা যায় না। ঠান্ডার কারণে সকালে যাত্রীও পাওয়া যায় না।