সিলেটে প্রকৃত অভিযুক্তদের আড়াল করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এক নারীর ধর্ষণ মামলার চেষ্টা
প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আড়াল করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের ধর্ষণ মামলার আসামি করতে সিলেট নগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় আসেন এক নারী (২৩)। তবে ওই নারীর কথাবার্তায় অসংগতি পাওয়ায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সন্দেহ হয়।
পরে পুলিশের জেরার মুখে ওই নারী সত্য স্বীকার করে প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আসামি করে গত মঙ্গলবার থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানায়, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে। ধর্ষণের শিকার ওই নারী মঙ্গলবার কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ করতে আসেন। তিনি প্রকৃত অপরাধী ব্যক্তিদের প্ররোচনায় নিরপরাধ কিছু ব্যক্তিকে আসামি করতে চান। এ সময় তাঁর কথাবার্তা ও আচরণ ওসি মো. জিয়াউল হকের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। ওসি এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) কামরুল ইসলাম ওই নারীর সঙ্গে আলাপ করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর যথাযথ ব্যক্তিদের আসামি করেই মামলা নেয় পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই নারী সিলেট নগরের একটি দরজির দোকানে কাজ করেন। খালাতো বোনের মাধ্যমে মো. রায়হান আহমেদ (৩৬) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। রায়হান পেশায় মুহুরি। পরিচয়ের পরে খালাতো বোনের অনুরোধে ওই নারী প্রায়ই মুঠোফোনে রায়হানের সঙ্গে কথা বলতেন। ১ জানুয়ারি নগরের মীরাবাজার মজুমদারপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন ওই নারী, তাঁর খালাতো বোন ও রায়হান। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মো. কবির মিয়া (৪২) ও মো. নুরুল আমিন মোজাম্মেল (২৫) এবং অজ্ঞাতনামা আরও এক ব্যক্তি ওই বাসায় আসেন। ওই নারীর খালাতো বোন ও রায়হান ওই ব্যক্তিদের চা-নাশতা খাওয়ান। কিছুক্ষণ পরে খালাতো বোন ও রায়হান ঘরের বাইরে অপেক্ষা করেন। এ সময় দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে ঘরে আসা ওই তিন ব্যক্তি পর্যায়ক্রমে ওই নারীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর খালাতো বোন গত রোববার তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করান। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ওই নারীকে জানান, তাঁদের কথামতো চললে তাঁকে টাকা দেওয়া হবে। এরপর তাঁরা মুঠোফোনে কয়েকজনের ছবি দেখিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী, ওই নারী ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, এমন কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করতে মঙ্গলবার কোতোয়ালি মডেল থানায় গিয়েছিলেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করতে আসা ওই নারী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন। এতে তাঁদের সন্দেহ হয়। পরে অবশ্য ওই নারী সব সত্য খুলে বলেন এবং প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। তাৎক্ষণিকভাবে চার আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অজ্ঞাতনামা অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার আসামি নুরুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওই নারী বলেন, প্রকৃত অপরাধী ব্যক্তিদের প্ররোচনায় তিনি অন্য ব্যক্তিদের নামে মামলা করতে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশের কাছে সত্য স্বীকার করে প্রকৃত অপরাধী ব্যক্তিদের নামে মামলা করেছেন।