দুর্ভোগ কমাতে মৌলভীবাজারে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের গর্ত ভরাট
এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তা ও স্বেচ্ছাশ্রমে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী-তেরাকুড়ি সড়কের গর্ত ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ কমাতে স্থানীয় লোকজন এ উদ্যোগ নেন। দিনের বেলা যান চলাচলসহ মানুষের যাতায়াতে সড়কটি ব্যস্ত থাকায় গতকাল শনিবার গভীর রাতে গর্ত ভরাটের কাজ করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অটোরিকশাচালকেরা এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে সড়কের কাঁঠালতলী বাজার থেকে ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক দুলালের বাড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের ছোট-বড় গর্তগুলো ভরাট করেন। সড়কের বাকি গর্তগুলো ভরাটের জন্য আরও এক লাখ টাকা প্রয়োজন। ওই টাকা সংগ্রহের পর বাকি গর্ত ভরাট করা হবে।
উদ্যোক্তা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে বড়লেখার কাঁঠালতলী-তেরাকুড়ি-শিমুলিয়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়ক মেরামতে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও বিভিন্ন সময় জানিয়েও সাড়া মেলেনি। সড়কটি উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের কাঁঠালতলী বাজার (বড়লেখা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক) থেকে পশ্চিমে সুজানগর ইউনিয়নের তেরাকুড়ির সঙ্গে মিশেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। কয়েক দফার বন্যায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। তখন হেঁটে চলাচল করাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ছোট-বড় যানবাহনের চালকেরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
এদিকে শিগগির সড়ক মেরামতের সম্ভাবনা না দেখে সম্প্রতি সড়কের গর্তগুলো ভরাটের চিন্তা করেন স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাংকার নাজমুল ইসলাম। এ নিয়ে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহিন আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। শাহিন কয়েকজন অটোরিকশাচালককে বিষয়টি জানালে চালকেরাও এগিয়ে আসেন। এরপর সবাই মিলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে পাথর, বালু ও সিমেন্ট কেনেন।
গতকাল শনিবার রাত ১০টা থেকে ব্যবসায়ী শাহিন আহমদের নেতৃত্বে রাজমিস্ত্রি আব্দুল আহাদ, অটোরিকশাচালক আব্দুর রুপ, সুমন আহমদ, বারহাম উদ্দিন, ইলিয়াস আহমদ, বাবুল আহমদসহ কয়েকজন মিলে সড়কের গর্ত ভরাটের কাজ শুরু করেন। ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত কাঁঠালতলী বাজার থেকে ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক দুলালের বাড়ি পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানের ছোট-বড় গর্তগুলো ভরাট করা হয়েছে। সম্পূর্ণ সড়কের গর্ত ভরাট করতে আরও প্রায় এক লাখ টাকা প্রয়োজন। স্থানীয় লোকজন থেকে বাকি টাকা সংগ্রহের পর সড়কের সব গর্ত ভরাট করা হবে বলে জানা গেছে।
ব্যাংকার নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার হয়নি। এ অবস্থায় চলাচল করতে খুবই ভোগান্তি হচ্ছিল। সম্প্রতি এ নিয়ে ব্যবসায়ী শাহিন আহমদসহ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে সবাই সাড়া দেন। এরপর সবাই মিলে টাকা তুলে গর্ত ভরাটের কাজ শুরু করা হয়।
ব্যবসায়ী শাহিন আহমদ বলেন, পুরো সড়কটির গর্ত ভরাট করতে আরও এক লাখ টাকা প্রয়োজন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি টাকা স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তুলে বাকি কাজ করা হবে। দিনের বেলা সড়কটি দিয়ে মানুষের চলাচল বেশি থাকায় রাতের বেলা কাজ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেই গর্ত ভরাট করা হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কাওছার আহমদ বলেন, ‘সড়কের কিছু দূর পরপর ছোট-বড় অনেক গর্ত। এতে চলাচলে সমস্যা হতো। স্বেচ্ছাশ্রমে গর্ত ভরাট করায় মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।’
সড়কটি বড়লেখা উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন। উপজেলা প্রকৌশলী প্রীতম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে সড়কটি কাজের তালিকায় রেখেছিলাম। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না আসায় কাজ করা যায়নি। কিছুদিন আগে একজন কাজ করার কথা বলেছেন। তাঁকে মৌখিকভাবে কাজ করার কথা বলেছি। বন্যায় উপজেলার অনেক রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। একসঙ্গে সব রাস্তার কাজ, সম্ভব হচ্ছে না। বরাদ্দ এলে এই রাস্তার কাজ করে দেওয়া হবে।’