পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। শ্রমিকনেতাদের অনেকেই সরকারের কাছে এই মজুরির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।
শ্রমিকদের অনেকেই বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় পরিবার নিয়ে চলা সম্ভব নয়। তাঁদের দাবি, ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করায় তাঁরা অসন্তুষ্ট নন। তবে এটি ১৫ থেকে ১৬ হাজার হলে ভালো হতো।
আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার বিভিন্ন কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। তাঁদের কয়েকজন বলেছেন, চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বেতন বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত পোশাকশ্রমিকেরা ইতিবাচক বা নেতিবাচক হিসেবে নিতে পারেন। এগুলো হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাসাভাড়া নিয়ন্ত্রণ, বেতন বাড়ায় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের চাপ সৃষ্টি না করা এবং শ্রমিক ছাঁটাই না করা। শ্রমিকদের অভিযোগ, যখনই বেতন বৃদ্ধি করা হয়, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মালিকেরা বাসাভাড়া বাড়িয়ে দেন। এতে ব্যয় বেড়ে যায়।
পোশাকশ্রমিক রায়হান বলেন, ‘জিনিসপত্রের দামের যে ঊর্ধ্বগতি, এতে আমাদের এই বেতনে চলা সম্ভব নয়। বেতন আরও বাড়াতে হবে। সংসার চালানো, মা–বাবাকে চালানো সম্ভব হবে না। এখন আমরা তো প্রতি মাসেই ধারে চলি। যে বেতন বাড়ানো হয়েছে, তাতে আমাদের কোনোমতেই চলা সম্ভব নয়। আমরা খুশি না।’
কয়েক দিনের আন্দোলনের পর সরকারের পক্ষ থেকে যে মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক আছে বলে জানান বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন আশুলিয়া অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন। তিনি বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাসাভাড়া যেন না বাড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। এ ছাড়া বেতন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মালিকপক্ষ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের চাপ সৃষ্টি করে। এটি যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না।
অন্যদিকে শ্রমিকনেতাদের কেউ কেউ বেতনবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, সরকারের কাছে ১৫ দিন সময় আছে এ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল, মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষ এমন একটি মজুরির প্রস্তাবনা দেবে, যেন শ্রমিকেরা অন্তত খেয়ে-পরে পরবর্তী দিনে কাজে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, মালিকপক্ষ ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দিল। মালিকদের অনুগত জায়গায় থেকে মজুরি বোর্ডও একই ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণার মাধ্যমে শ্রমিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের জীবনধারণের জন্য যে মজুরি দরকার, সেটি হয়নি।’ তিনি বলেন, যেহেতু প্রস্তাবিত মজুরি পুনর্বিবেচনার জন্য ১৫ দিন পর্যন্ত সুযোগ আছে, সে জন্য সরকারের উচিত, শ্রমিকদের জীবনধারণের উপযোগী এবং বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়া।