গাজীপুরে মহাসড়ক ফাঁকা, শেষ মুহূর্তে স্বস্তি নিয়ে ফিরছেন ঘরমুখী মানুষ
টানা কয়েক দিনের ভোগান্তির পর ঈদযাত্রার শেষ দিনে অনেকটা স্বস্তি নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন ঘরমুখী মানুষ। আজ রোববার দুপুরের পর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোনো যানজট দেখা যায়নি। ফাঁকা মহাসড়কে স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরা।
মহাসড়কে যানজট না থাকলেও সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে হাইওয়ে, গাজীপুর জেলা ও মহানগর পুলিশ। যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আজ রাত পর্যন্ত তারা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুরে মহাসড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাড়িতে ফিরতে বাসস্ট্যান্ড ও কাউন্টারগুলোতে ঘরমুখী মানুষের ভিড় আছে। গত কয়েক দিনের মতো আজও ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় ও নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহন ও ঘরমুখী মানুষের চাপ দেখা যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপুরের পর থেকে দুই মহাসড়কেই গাড়ির চাপ কমতে শুরু করে।
হাইওয়ে পুলিশ ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শিল্প-অধ্যুষিত গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানা গত বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি হতে শুরু করে। ওই দিন থেকেই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন ঘরমুখী মানুষ। সর্বশেষ গতকাল শনিবার দুপুরের পর একযোগে সব কারখানায় ছুটি হলে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ বৃদ্ধি পায়। এতে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা ঘিরে তিন দিকেই কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় থেমে থেমে যানজট দেখা দেয়।
রাতভর গাড়ির চাপ থাকলেও আজ সকাল থেকে ধীরে ধীরে চাপ কমতে থাকে। আজ বেলা দেড়টার পর পুরো মহাসড়ক ফাঁকা হয়ে যায়। তবে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখী মানুষকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কিছু পরিবহনকে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
অনন্ত পরিবহনের চালক মো. মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যাবেন বগুড়া পর্যন্ত। পর্যাপ্ত যাত্রী না পেয়ে অপেক্ষা করছেন। যাত্রী পাওয়া গেলে তিনি যাবেন। না হলে ঢাকায় ফিরে যাবেন।
চন্দ্রায় অপেক্ষমাণ মোল্লা ট্রাভেলসের চালকের সহযোগী কবির হোসেন বলেন, ‘যাত্রী না পাওয়ায় যাইতে পারছি না। যাত্রী না হলে রাস্তায় টোল আছে, তেলের খরচ আছে, আবার চালক ও চালকের সহকারীর খরচ আছে। এসব টাকা না উঠলে কীভাবে যাব?’
চন্দ্রায় অন্তত ৫০০ যাত্রীকে পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেল। তাঁদের কেউ ট্রাকে, কেউবা পিকআপে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এসআর ট্রাভেলসের সামনে কারখানাশ্রমিক মোকলেছুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাস তো আছে। কিন্তু ৩০০ টাকার ভাড়া চাইতেছে ৬০০ টাকা। কেমনে যাব? ৫০ টাকা বেশি দেওয়া যেতে পারে। তাই বলে ডাবল দেব। পরিবারের চারজন সদস্য নিয়ে যেতে খরচ হয়ে যাবে ২ হাজার ৪০০ টাকা। রাস্তায় খাওয়ার খরচ আছে। এত টাকা ভাড়া দিলে যা বোনাস পেয়েছি, সবই তো চলে যাবে।’
পোশাকশ্রমিক হাফিজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বাসগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না। এখন রাস্তা ফাঁকা। এরপর বাসের লোকজন বেশি ভাড়া চাচ্ছেন।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল পর্যন্ত যানবাহনের চাপ থাকলেও দুপুরের পর থেকে মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। এখন যাঁরা বাড়ি যাচ্ছেন, তাঁরা অনেকটা স্বস্তি নিয়ে বাড়িতে যেতে পারছেন।