নরসিংদীতে ‘প্রতিশোধ নিতে’ তরুণকে ধাওয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বের জেরে মারুফ হোসেন (২০) নামের একজন তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিবপুর থানাসংলগ্ন সদর রোডের একটি তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত মারুফ হোসেন উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর এলাকার প্রয়াত মো. মোশাররফ হোসেনের ছেলে। বাবার চাকরি সূত্রে প্রাপ্ত কোয়ার্টারে মাকে নিয়ে বসবাস করে স্থানীয় বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন মারুফ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবপুরে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ সক্রিয় আছে। এর মধ্যে মারুফ গ্রুপের প্রধান ছিলেন মারুফ হোসেন (২০) ও সৈকত গ্রুপের প্রধান শওকত আলী সৈকত (২৫)। মাস দুয়েক আগে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে শওকত আলীকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করেছিল মারুফ গ্রুপ। শওকত বেঁচে ফেরেন, মারুফও মাকে নিয়ে এলাকা ছাড়েন। ওই ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ছিলেন মারুফ।
পুলিশ ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর আজ সকালে মারুফকে এলাকায় অবস্থান করতে দেখা যায়। এ সময় সৈকত গ্রুপের সদস্যরা তাঁর ব্যাপারে থানা-পুলিশকে তথ্য দেন। কিন্তু পুলিশ তৎপর হওয়ার আগেই বেলা ১১টার দিকে সৈকতের নেতৃত্বে মারুফকে ধাওয়া দেওয়া হয়। ধাওয়া খেয়ে মারুফ দৌড়াতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সদর রোডে মিষ্টির দোকানি রাজীবের তিনতলা বাড়িতে ঢুকে পড়েন মারুফ। পিছু পিছু সৈকত গ্রুপও ওই বাড়িতে যায়। বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে মারুফ ঢুকলে সেখানে তাঁকে উপর্যুপরি কোপায় তারা।
হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন মারুফকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেন। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, মারুফ নামের ওই তরুণকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর মাথা, ঘাড়, কান, গাল, হাত, হাঁটুতে উপর্যুপরি কোপানো হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
দ্বিতীয় তলার যে কক্ষে মারুফকে হত্যা করা হয়, তাতে বসবাস করেন কয়েকজন হিজড়া। তাঁরা বলেন, ‘প্রথমে দৌড়ে মারুফ আমাদের কক্ষে ঢুকে পড়েন। এরপরই বেশ কয়েকজন জোর করে ঢোকেন। ঢুকেই তাঁরা আমাদের রুম থেকে বের করে দেন। তাঁরা উপর্যুপরি কুপিয়ে চলে গেলে আমরা ভেতরে গিয়ে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাই। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালে পাঠাই।’
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।