আগৈলঝাড়ায় গৃহবধূসহ তিনজনকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ

নারী নির্যাতনপ্রতীকী ছবি

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এক গৃহবধূ, তাঁর মাসহ তিন নারীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার সকালে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে মামলা করেছেন ওই গৃহবধূ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মারধরের ঘটনা ঘটে।

আহত তিন নারী হলেন বাগধা ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদ ত্রিশিরা গ্রামের বাসিন্দা লিলি মণ্ডল ও তাঁর মা ববিতা হালদার এবং তাঁদের প্রতিবেশী সুবর্ণা হালদার। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন লিলির স্বামী সৌভিক হালদার, শ্বশুর তাপস হালদার ও শাশুড়ি নিতু রানী হালদার। তাঁরা সবাই একই উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পশ্চিম সুজনকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুঠোফোনে পরিচয়ের সুবাদে লিলি ও সৌভিকের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে একটি মন্দিরে তাঁরা বিয়ে করেন। একই বছরের ৭ এপ্রিল বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে আইনগতভাবে তাঁদের বিয়ে হয়। কিন্তু তাঁদের বিয়ের বিষয়টি সৌভিকের পরিবার মেনে নেয়নি। এক বছরের বেশি সময় ধরে এই দম্পতি বিভিন্ন জায়গায় একত্রে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি সৌভিককে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান তাঁর বাবা তাপস হালদার ও মা নিতু রানী হালদার। পরে লিলির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সৌভিক।

দেড় মাস ধরে সৌভিক হালদার আমার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ২৭ জুন (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকালে আমি, আমার মা (ববিতা হালদার) ও প্রতিবেশী সুবর্ণা শ্বশুরবাড়ি গ্রামে যাই। তাঁদের বসতঘরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বামী (সৌভিক), শ্বশুর (তাপস হালদার) ও শাশুড়ি (নিতু রানী হালদার) আমার ওপর চড়াও হন।
গৃহবধূ লিলি মণ্ডল

এ বিষয়ে লিলি মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, ‘দেড় মাস ধরে সৌভিক হালদার আমার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ২৭ জুন (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকালে আমি, আমার মা (ববিতা হালদার) ও প্রতিবেশী সুবর্ণা শ্বশুরবাড়ি গ্রামে যাই। তাঁদের বসতঘরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বামী (সৌভিক), শ্বশুর (তাপস হালদার) ও শাশুড়ি (নিতু রানী হালদার) আমার ওপর চড়াও হন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার একপর্যায়ে তিনজন মিলে আমাকে কিলঘুষি, চড়থাপ্পড় ও লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এ সময় আমার মা ও সুবর্ণা এগিয়ে এলে তাঁদেরও পিটিয়ে জখম করা হয়।’

সেখান থেকে ওই তিন নারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বখতিয়ার আল মামুন আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, রোগীদের মধ্যে একজন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। বাকিদের জখম-ফোলা আছে। সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

লিলি মণ্ডলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে আমরা পরিবারের অমতে বিয়ে করি। আমার মা-বাবা এ সম্পর্ক মেনে নেননি। ওই দিন আমার স্ত্রী বাড়িতে এলে বাবা-মা তাকে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেখান থেকে না বের হওয়ায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তবে আমার বিরুদ্ধে মারধরের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
লিলির স্বামী সৌভিক মণ্ডল

অভিযোগের বিষয়ে লিলির স্বামী সৌভিক মণ্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লিলি মণ্ডলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে আমরা পরিবারের অমতে বিয়ে করি। আমার মা-বাবা এ সম্পর্ক মেনে নেননি। ওই দিন আমার স্ত্রী বাড়িতে এলে বাবা-মা তাকে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেখান থেকে না বের হওয়ায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তবে আমার বিরুদ্ধে মারধরের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।’

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।