পর্যটকের ভিড়ে গভীর রাতেও গমগম করছে কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আজ শনিবার পর্যটকের ঢল নেমেছে। কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা এখন লোকে লোকারণ্য। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতেও সৈকতে পর্যটকেরা ভিড় জমিয়েছেন। পুরো হোটেল-মোটেল জোনই যেন জেগে ছিল সারা রাত। ভ্রাম্যমাণ দোকানের সামনে জটলা দেখা গেছে ভোরের আলো ফোটার আগেও।
দুর্গাপূজার ছুটি উপলক্ষে গত বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারে আসতে শুরু করেন। আগামীকাল রোববার বিকেলে সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের দিন পর্যন্ত পূজার চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে অন্তত ছয় লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করছেন হোটেলের মালিকেরা। গত দুই দিনে (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) আড়াই লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। আজ শনিবার অন্তত দেড় লাখ পর্যটক এসেছেন বলে কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান। তিনি বলেন, অতিরিক্ত চাপের কারণে হোটেল কক্ষের ভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম বেশি আদায় করা হচ্ছে কি না, তা তদারকি হচ্ছে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। এখন কোনো হোটেলই খালি নেই।
হোটেলমালিকেরা জানান, আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সৈকতে পর্যটকের সমাগম থাকবে। তবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজের কক্ষ খালি নেই। পর্যটক টানতে ২০ দিন আগে কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণাও বুধবার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
আজ সকাল ১০টার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকতে হাজারো মানুষের ভিড়। কেউ পানিতে নেমে গোসল করছেন, কেউ–বা দ্রুতগতির জলযান জেট স্কি নিয়ে গভীর সমুদ্রে ঘুরছেন। সুগন্ধার দক্ষিণে কলাতলী, উত্তরে সিগাল ও লাবণী পয়েন্টেও এমন ভিড় দেখা গেছে। সেখানে পর্যটকদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন সি–সেফ লাইফ গার্ডের ২৭ জন উদ্ধারকর্মী। ঢেউয়ের ধাক্কায় টিউব থেকে ছিটকে পড়ে কিংবা স্রোতের টানে কেউ ভেসে গেলে মুহূর্তে উদ্ধার করে আনছেন তাঁরা। সন্ধ্যার আগে সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার কানায় কানায় ভরে যায়। তখন অন্তত দেড় লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে জানিয়ে সি-সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, গত ছয়-সাত মাসে এত পর্যটকের সমাগম দেখা যায়নি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পর্যটকের যাতায়াত সীমিত করা হয়। এ কারণে বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারমুখী।
দেখা গেছে, পর্যটকেরা সৈকতে ভ্রমণ শেষে জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহে ছুটছেন। সন্ধ্যার আগে শহরে ফিরে আবার সৈকতে নেমে আড্ডা জমাচ্ছেন। অনেকে শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্যসহ পছন্দের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন।
বিকেলে লাবণী পয়েন্টে দেখা হয় ঢাকা থেকে আসা স্কুলশিক্ষক রকিবুল ইসলামের সঙ্গে। শুক্রবার সকালে তাঁরা কক্সবাজারে পৌঁছান। রকিবুল বলেন, ‘দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্কুল বন্ধ, সবাই মিলে সমুদ্রের লোনাপানিতে গোসলের জন্য কক্সবাজারে ছুটে এলাম। সৈকতে এত ভিড় হবে ভাবিনি।’
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি কক্সবাজারে পৌঁছান। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে। কলাতলীর একটি রিসোর্টে ওঠেন। তাঁর অভিযোগ, পর্যটকের অতিরিক্ত চাপের অজুহাতে হোটেলমালিকেরা অতিরিক্ত কক্ষভাড়া আদায় করছেন। তিন শয্যার একটি এসি কক্ষের ভাড়া বড়জোর তিন হাজার টাকা হওয়ার কথা, সেখানে তাঁর কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। হোটেলে কক্ষভাড়ার তালিকাও টাঙানো থাকে না।
পর্যটকের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, সৈকতে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সাদাপোশাকের পুলিশ রয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি, ইনানী-পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সৈকতসহ সব দর্শনীয় স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও নিয়ন্ত্রণকক্ষের মাধ্যমে সৈকতকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। হয়রানি কিংবা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।