লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি, সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা

কক্সবাজারে লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলন। আজ দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার উপকূলে এখন লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত মৌসুমের তুলনায় এবার দেড় গুণ বেশি লবণ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু লবণ বিক্রি করতে হচ্ছে লোকসান দিয়ে। প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনের বিপরীতে চাষিদের ১৫ টাকা খরচ হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ৭ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম সাড়ে আট টাকা পড়লেও বাজারে প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়।

লবণচাষিদের অভিযোগ, কিছু মিল (কারখানা) মালিক সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাতে জেলার ৪৪ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ লবণ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অন্তত ১৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন লবণচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবির কথা তুলে ধরেন কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পরিষদের আহ্বায়ক মকছুদ মিয়া, কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ টি এম নুরুল বশর চৌধুরী, চকরিয়া মাতামুহুরী উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামিল ইব্রাহিম প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ বিভিন্ন উপকূলের ৬৬ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদার ৯০ ভাগ লবণের চাহিদা কক্সবাজার থেকে পূরণ হয়ে আসছে। গত দু-তিন মৌসুমে লবণের ন্যায্যমূল্য পেয়ে চাষিরা চলতি মৌসুমে বিশেষ আগ্রহ নিয়ে মাঠে নামেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গত মৌসুমের তুলনায় দেড় গুণের বেশি লবণ উৎপাদিত হচ্ছে।

বিসিকের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৬৬ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ওই পরিমাণ জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন।

লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কিছু মিলমালিক সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। মৌসুমের শুরুতে (নভেম্বর মাসে) মিলমালিকেরা প্রতি বস্তা (বস্তাতে ৮০ কেজি) লবণ ১ হাজার ৪০০ টাকায় কেনেন। দফায় দফায় কমিয়ে এখন সেই লবণ ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনা হচ্ছে। আবার বস্তাপ্রতি অর্থাৎ ৮০ কেজি লবণের সঙ্গে বিনা মূল্যে ১০-১৫ কেজি করে অতিরিক্ত লবণ দিতে হচ্ছে। তাতে লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের।

বর্তমানে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদন করতে ১৫ টাকা খরচ হলেও লবণ বিক্রি করে চাষিরা পাচ্ছেন ৮ টাকা। লোকসান গুনতে গুনতে চাষিরা হতাশ হয়ে এখন লবণ উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ের লবণ ব্যবসায়ীরাও চরম হতাশ। তাঁরা বেশি টাকায় লবণ কিনে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ সাত-আট টাকায় কেনা হলেও বাজারে প্যাকেজজাত লবণের দাম কমছে না। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভোজ্য লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়।

কুতুবদিয়ার লবণচাষি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ টি এম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, লবণের এমন দরপতনে উপকূলের মানুষ দিশেহারা। দেশে উৎপাদিত লবণের দাম কমিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চক্রান্ত করছেন। অথচ স্বয়ংসম্পূর্ণ লবণক্ষেত্র থেকে সরকার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে থাকে। আর লবণের মিলমালিকেরা সিন্ডিকেট করে দেশীয় লবণশিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত।

লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অন্যথায় দেশীয় লবণশিল্পটি আবারও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়বে। পথে বসবে ৪৪ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ দেড় লাখের বেশি লবণশ্রমিক।