নড়াইলে হত্যার জেরে আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট

আসামিপক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় আনিস শেখ (৩২) নামের এক যুবককে হত্যার জেরে আসামিপক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা ২৫ ও ২৭ জুন উপজেলার নড়াগাতি থানায় এ বিষয়ে দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। হুমকিতে এলাকা ছাড়া আসামিপক্ষের লোকজন। আতঙ্কে দিন কাটছে বাড়ির নারীদের। সর্বশেষ ২৪ জুন রাতে দুটি ঘরে ভাঙচুর এবং প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৩১ মে সন্ধ্যার দিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন একই গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে আনিস শেখ। এ ঘটনায় নিহত আনিসের ভাই কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল শেখ বাদী হয়ে নড়াগাতি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপরই দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ১০ জুন রাতে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি জাহিদুল শেখসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

আনিস হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নড়াগাতি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন্ত বিশ্বাস বলেন, আনিস শেখ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র‍্যাব মিলে মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা সবাই কারাগারে আছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আসামিপক্ষের লোকজনের দাবি, আনিস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। আনিসের ভাই সোহেল শেখের নেতৃত্বে দফায় দফায় আসামিপক্ষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। আসামিপক্ষের লোকজন ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাতে প্রথম দফায় ৬টি এবং এক সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় দফায় আসামিপক্ষের আরও ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ জুন রাতে তৃতীয় দফায় আসামিপক্ষের দুটি বাড়ি থেকে সাতটি স্যালো মেশিন, একটি সেচ মোটর ও মাছের ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ মেরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘরবাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। তাঁদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এসব ঘটনায় নড়াগাতি থানায় গত মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী ঘেরমালিক মারুফ শেখ ও রুবিয়া বেগম লিখিত অভিযোগ করেছেন। মারুফ শেখ বলেন, প্রতিপক্ষ হওয়ায় হত্যাকাণ্ডের জেরে তাঁর ঘেরে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। তাঁর ঘের থেকে মাছ এবং চারটি শ্যালো মেশিন নিয়ে গেছে। গাছের পেঁপে ও করলাগাছ কেটে রেখে গেছে। এতে তাঁর ১২-১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কলাবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ হাসিনা বেগম বলেন, ‘আনিস মার্ডারের পরে তাঁর ভাইয়ের নেতৃত্বে আমাগের ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, পাঁচটা গরু নিয়ে গেছে। এখনো হুমকি দেচ্ছে, আমরা আতঙ্কে আছি, বাড়িঘরে থাকতে পারতেছি না।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল শেখ বলেন, ‘এসব ভুয়া কথা। ওরা নিজেরা পেঁপেগাছ এবং করলাগাছ কেটেছে।’

ভাঙচুর, লুটপাট ও হুমকির বিষয়ে সোহেল শেখ বলেন, ‘শুরুতে ছেলেপেলে একটু করছিল। আমি এসবের পক্ষে না। আমি কাউকে এসব করতে দিইনি। তাঁদের (অভিযোগকারীদের) কথা সত্য নয়।’

নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘেরে ক্ষতিসাধনের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কাজ করছে।