সাভার-আশুলিয়ায় বন্ধ ৫৫টি কারখানা, আগের হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় এনভয় কমপ্লেক্সের ফটকের সামনে টাঙানো রয়েছে কারখানা বন্ধের নোটিশছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ শিল্পকারখানায় আজ মঙ্গলবার কাজ শুরু করছেন শ্রমিকেরা। ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, হাজিরা–টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে সেখানকার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আজও সেখানে বন্ধ রয়েছে ৫৫টি শিল্পকারখানা।

এদিকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বিশৃঙ্খলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল সোমবার রাতে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আশুলিয়া থানার পুলিশ।

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর আওতাধীন সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইয়ে তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, প্লাস্টিক, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা রয়েছে ১ হাজার ৮৬৩টি। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও শ্রমিক নেতারা জানান, ওই সব এলাকার কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁরা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ও হাজিরা–টিফিন বিল বৃদ্ধি করার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, দাবি পূরণের বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘোষণা দিতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগে গত মাসের শেষের দিকে হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, কারখানায় নারী শ্রমিকের সমানুপাতিক পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ নানা দাবিতে কয়েকটি কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। তখন কয়েকটি কারখানা শ্রম আইন-২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ জানায়, আজ সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বন্ধ রয়েছে ৫৫টি শিল্পকারখানা। তবে সব কটি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়নি। কিছু কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ বা শ্রমিক কাজ না করে বসে থাকলে কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধ বা ছুটি ঘোষণা করে। পরে ওই সব কারখানার শ্রমিকেরা আশপাশের কারখানার সামনে বিক্ষোভ বা সহিংস আচরণ করলে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যান্য কারখানা বন্ধ বা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ গামের্ন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, আশুলিয়ায় ৮ থেকে ১০টি তৈরি পোশাক কারখানার সমস্যা সমাধান করা গেলে বাকি সব কারখানার সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। হা-মীম, শারমিন, নাসা, অনন্ত, দ্য রোজ—এসব কারখানা শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার অন্যান্য কারখানার অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। মূলত এসব কারখানার দিকে তাকিয়ে থাকেন অন্য কারখানার শ্রমিক ও মালিকপক্ষ। এসব কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে হবে। তাহলে অন্য কারখানাগুলোও ঠিক হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, প্লাস্টিক, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আজ শ্রম আইন-২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় ৪৬টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ৯টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে।

শিল্পাঞ্চলে বিশৃঙ্খলায় উসকানির অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫
পোশাকশিল্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে শ্রমিকদের উসকানি, কারখানা ভাঙচুর, রাস্তা অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লার বড়ুরার আবদুর রশিদের ছেলে শাহাপরান (৩৩), টাঙ্গাইলের নাগরপুরের রেমিম মিয়ার ছেলে রাব্বি মিয়া (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সাইদুলের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৮), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা জংশন এলাকার মৃত আরশেদ আলীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩৮) ও ঢাকার আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার আবদুল হালিমের ছেলে শুক্কুর আলী (৪০)।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় দায়িত্ব পালনের সময় র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পরদিন ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করে। ওই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।