আড়াইহাজারে মধ্যরাতে ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণে দুজন নিহত, দগ্ধ আরও ২
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মধ্যরাতে একটি বহুতল ভবনে বিস্ফোরণে মা-মেয়েসহ চারজন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আজ শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন। ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাকি দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আড়াইহাজার পৌরসভার লাসরদী গোয়ালপাড়া এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে এ বিস্ফোরণ ঘটে। দগ্ধ সবাই ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে। বদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন কানিজ খাদিজা ওরফে নিপা (৩৫) ও চায়না বেগম। দগ্ধ দুজন হলেন কানিজ খাদিজার মা হাসিনা মমতাজ (৬০) ও চায়না বেগমের স্বামী রহমান মিয়া (৪৫)। কানিজ খাদিজা স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার অপারেটর এবং রহমান মিয়া একই কারখানার সুপারভাইজার।
চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে রহমান মিয়ার শরীরের ৯৯ শতাংশ, চায়না বেগমের ৯০ শতাংশ, কানিজ খাদিজার ৯০ শতাংশ ও হাসিনা বেগমের শরীরের ৫৫ শতাংশ দগ্ধ হয়। আজ সকাল সাতটার দিকে কানিজ খাদিজা ও বেলা দুইটার দিকে চায়না বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপর দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁদের চিকিৎসা চলছে।
আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে আমরা একটি বিস্ফোরণের খবর পাই। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি, সানাউল্লাহ নামের এক ব্যক্তির পাঁচতলা একটি ভবনের চারতলার ফ্ল্যাটে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। ওই ফ্ল্যাটে রহমান মিয়া ও তাঁর স্ত্রী চায়না বেগম এবং কানিজ খাদিজা যৌথভাবে ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তাঁরা একই রান্নাঘরে রান্না করতেন। রান্নাঘরটিতে সিলিন্ডার ও তিতাস গ্যাসের সংযোগ আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অসাবধানতাবশত রান্না শেষে চুলা বন্ধ না করায় বদ্ধ ঘরে তিতাস গ্যাস জমে। এরপর বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা উড়ে গেছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আড়াইহাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবনটির পাশেই আমার বাড়ি। আমরা তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ একটি বিকট শব্দ হয় এবং আমার বাড়ি কেঁপে ওঠে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা দৌড়ে ঘর থেকে বের হই। পরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘটনাস্থলে এসে দেখি, ভবনের চারতলায় বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে সবাই মিলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে পাঠিয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিই।’
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অসাবধানতাবশত রান্না শেষে চুলা বন্ধ না করায় বদ্ধ ঘরে তিতাস গ্যাস জমে। এরপর বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
আজ দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের চারতলার তিনটি কক্ষের আসবাব তছনছ হয়ে পড়ে আছে। কক্ষগুলোর দরজা-জানালা ভাঙা। জানালার কাচের টুকরা ও জানালার গ্রিল ভবনটির আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আগুনে পোড়া বিছানায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি মুঠোফোন পড়ে আছে। মেঝেতে পোড়া চামড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে থাকা তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত।
নিহত কানিজ খাদিজার বড় বোন ইভা ইসলাম জানান, তাঁদের বাড়ি গোপালদী পৌর এলাকায়। যাতায়াতের সুবিধার জন্য কানিজ খাদিজা কারখানার কাছাকাছি ওই ভবনে সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকতেন। গতকাল তাঁর মা হাসিনা মমতাজ ও তিনি খাদিজার বাসায় বেড়াতে যান। রাতের খাবার খেয়ে তিনি বাড়ি চলে গেলেও তাঁর মা খাদিজার সঙ্গে থেকে যান। খাদিজার বাসা থেকে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণে মা-বোন দগ্ধ হওয়ার খবর পান তিনি।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাস জমে হয়ে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা ধারণা করছি। এ ঘটনায় আজ বিকেল চারটা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।’