‘আমরা বিভিন্ন সময় শুনি, এই পত্রিকা বিএনপির মুখপত্র, ওই পত্রিকা আওয়ামী লীগের মুখপত্র। কোনো পত্রিকা জামায়াত, জাতীয় পার্টির মুখপত্র। সেখান থেকে প্রথম আলো কোনো দলের মুখপত্র না হয়ে দেশের মুখপত্র হয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর রোষানলে পড়েছে। প্রতিটি সংবাদমাধ্যমকে এমন হওয়া উচিত।’
মুন্সিগঞ্জে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি সিরাজুল হক। আজ রোববার মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিক শফিউদ্দিন আহমেদ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো মুন্সিগঞ্জ বন্ধুসভা। ‘জেগেছে বাংলাদেশ’ স্লোগানে একইভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গাজীপুর ও লালমনিরহাটেও প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জে অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার বন্ধু ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মুন্সিগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি নুরুন্নবী মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি মো. ফয়সাল হোসেন।
অতিথিদের মধ্যে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সরকারি হরগঙ্গা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফারুখ মিয়া, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাইদুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুজন হায়দার, মুন্সিগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নোমান আল মাহমুদ, মৌমিতা তাসনিম খান, শাহরিয়ার আমিন প্রমুখ।
নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ছিল সমাজ ও দেশের প্রতিটি স্তরের বৈষম্য দূর করার জন্য। মানুষের বাক্স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্য। আর এ কাজগুলো প্রথম আলো সূচনালগ্ন থেকে করেছে।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কঠিন দিনগুলোয় সাহস, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আগামী দিনেও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে প্রথম আলোকে তার সাহসী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
আলোচনা শেষে মুন্সিগঞ্জে ডেঙ্গু ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে মানবিক অবদান রাখায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মো. সাইদুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জের কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
গাজীপুর
গাজীপুরে প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় গাজীপুর জেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে। সেখানে অতিথির বক্তব্যে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, ‘আমরা প্রথম আলোর ২৬ বছরের পথচলা দেখেছি। এটি যে সাবলীলভাবে পথ চলেছে, সে রকম নয়। পদে পদে তাকে প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়। এটা দেখেই আমরা বুঝতে পারি, প্রথম আলো সঠিক পথেই আছে।’
আজ বেলা ১১টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গাজীপুর ভাষাশহীদ কলেজের অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোদাচ্ছির বিন আলী, সাংবাদিক ও লেখক ফারদিন ফেরদৌস, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, টিআইবির গাজীপুরের কো-অর্ডিনেটর আবুল ফজল মোহাম্মদ আহাদ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন, বইপোকা পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মণ্ডল মাধব চন্দ্র, গাজীপুর বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নাইমা সুলতানা, গাজীপুর বন্ধুসভার সভাপতি ইসতিলা ইসতি, সহসভাপতি সজীব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আরাফত মণ্ডল প্রমুখ।
মুকুল কুমার মল্লিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রথম আলোর শুরু থেকেই আমি এর পাঠক। এই পত্রিকাটির বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। বস্তুনিষ্ঠতা, সংবাদের গভীরতায় আস্থা এখন আরও বেড়েছে। একসময় বলা হতো নলেজ ইজ পাওয়ার। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন বলা হয় তথ্যই শক্তি। এই শক্তি প্রথম আলোর আছে।’
গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোদাচ্ছির বিন আলী নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বিসিএস প্রস্তুতির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে প্রথম আলোর চাকরি প্রস্তুতি পাতা পড়তাম। আর কোনো বই পড়িনি। প্রথম আলোর তথ্যের ওপর আস্থা ছিল। সেটা পড়েই বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। সফল হয়েছি। এই পত্রিকাটির তথ্যের ওপর চোখ বন্ধ করে আস্থা রাখা যায়।’
গাজীপুর বন্ধুসভার ইমদাদুল ইসলাম ও তানিয়া আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে পরিবেশিত হয় মূকাভিনয়। গাজীপুর বন্ধুসভার সদস্য তানভীর হাসানের একক পরিবেশনায় ‘রং, রক্ত এবং একটি চিৎকার’ শিরোনামে এই মূকাভিনয় উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন গাজীপুর বন্ধুসভার সদস্য রাঘাত বিনতে পাশা, লোকগান পরিবেশন করেন শাহরিয়ার শামিম ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন শৈশব কুরাইয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলো গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা, গাজীপুর সংবাদদাতা আল আমিন ও শ্রীপুর প্রতিনিধি সাদিক মৃধা।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাট শহরের রেলস্টেশন রোডের বার্ণহার্ডট ইনক্লুসিভ স্কুল মিলনায়তনে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বন্ধুসভা। এতে বক্তব্য দেন লালমনিরহাট সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আরমান রহমান, লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক, লালমনিরহাট জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আবু হাসনাত, ২০২২ সালে আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননায় ভূষিত লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক তৌহিদ উল ইসলাম, লালমনিরহাট সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাদেকুল ইসলাম, লালমনিরহাটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাসিম উদ্দিন, নাট্যজন মাখন লাল দাশ, নারী অধিকার সংগঠক ও কবি স্বপ্না জামান প্রমুখ।
আরমান রহমান বলেন, ‘প্রথম আলো দেশের আর দশটি দৈনিক পত্রিকার মতো শুধু একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা নয়; বরং প্রথম আলো হচ্ছে সত্যে তথ্যে ২৬ বছর ধরে অটল থাকা, অবিচল থাকা, টিকে থাকা যেন একটি নাগরিক সংগঠন, যার কাছে দেশের মানুষের ইতিবাচক অনেক প্রত্যাশা। আস্থা, বিশ্বাস ও ভালো লাগা এবং ভালোবাসায় সিক্ত একটি পত্রিকা।’
লালমনিরহাট বন্ধুসভার সহসভাপতি ফারাহ নাজ নাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর লালমনিরহাট প্রতিনিধি আবদুর রব। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন হেলাল হোসেন ও সুবাইতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত শিল্পী রাওয়ানা মার্জিয়ার নেতৃত্বে একদল শিশুশিল্পী দেশাত্মবোধক ও পুরোনো দিনের গান পরিবেশন করেন।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রথম আলো শুরু থেকেই সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করে আসছে। তাই বিভিন্ন সময় প্রথম আলোকে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। সব বাধা মোকাবিলা করে প্রথম আলো সুসাংবাদিকতা করে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সেমিনারকক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ওই বিভাগের অধ্যাপক ওবাদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, মেসবাহ উদ্দিন তালুকদার, সহকারী অধ্যাপক সজীব আল রেজা, ইলিয়াস উদ্দিন, প্রভাষক রাকিবুল হাসান ও আবু জোবায়ের। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার সদস্য তৌসিফ কবীর। অনুষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিত ১৫ শিশুকে শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল; প্রতিনিধি, লালমনিরহাট, গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জ]