রাজশাহীতে গুমের অভিযোগে ৮ বছর পর র‍্যাবের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

নিখোঁজ ইসমাইল হোসেনছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এক যুবককে গুম করার অভিযোগে আট বছর পর আদালতে মামলার আবেদন করেছেন তাঁর স্ত্রী নাইস খাতুন (৩০)। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার আমলি আদালতে এ আবেদন করেন তিনি।

আদালত বাদীর বক্তব্য শুনেছেন, তবে বিকেল পর্যন্ত আদেশ দেননি। মামলায় ২০১৬ সালে র‍্যাব-৫–এর রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পে কর্মরত সাত সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গুম হওয়া যুবকের নাম ইসমাইল হোসেন। তাঁর বাবার নাম ইসরাইল হোসেন। বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি আলীপুর মহল্লায়। তিনি একজন সোনা ব্যবসায়ী ছিলেন। গুম হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর।

ভুক্তভোগী ব্যক্তির স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে গুম করেছে র‍্যাব। তিনি যাঁদের আসামি করার আবেদন করেছেন, তাঁরা হলেন র‍্যাব-৫–এর তৎকালীন রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার শাহিনুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) দেবব্রত মজুমদার, দুলাল মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন, ল্যান্সনায়েক মাহিনুর খাতুন, সেপাই কহিনুর বেগম ও কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম।

নাইস খাতুন জানান, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর স্বামী ইসমাইল হোসেন দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে পৌঁছালে র‍্যাবের সদস্যরা তাঁকে তুলে নিয়ে যান। তিন দিন পর ইসমাইল অন্য এক ব্যক্তির মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করে পরিবারকে জানান, তিনি র‍্যাবের হেফাজতে আছেন।

নাইস খাতুন বলেন, র‍্যাবের সদস্যরা যখন ইসমাইলকে তুলে নিয়ে যান, তখন অনেকেই দেখেছেন। এ ছাড়া মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি র‍্যাবের ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় সেখানে ইসমাইলকে দেখেছেন। ইসমাইল র‍্যাবের হেফাজতে আছেন জেনে তাঁরা ওই সময় র‍্যাব-৫–এর অধিনায়কের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেন। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। তিনি বলেন, র‍্যাব ক্যাম্পে থাকা যে দুই ব্যক্তি ইসমাইলকে দেখেন এবং যাঁরা তাঁকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন, তাঁদের সাক্ষী করা হচ্ছে।

নাইস আশঙ্কা করছেন, র‍্যাবের সদস্যরা তাঁর স্বামীকে তুলে নেওয়ার পর হত্যা করে লাশ গুম করেছেন। এত দিন র‍্যাবের ভয়ে তিনি মামলা করতে পারেননি। এখন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তিনি মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে। তাই তিনি আদালতে এসেছেন। তিনি বলেন, এত দিন তাঁরা মনে করতেন, কথিত আয়নাঘরে ইসমাইলকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী সরকার পতনের পর আয়নাঘর থেকে কেউ কেউ ফিরে এলে ইসমাইলের ছোট ভাই ইউসুফ আলী ঢাকায় ছুটে যান। ইসমাইলের ছোট দুই সন্তানও বাবার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু ইসমাইলকে ছাড়াই বাড়ি ফিরে এসেছে ইউসুফ। এরপরই তাঁরা মামলার সিদ্ধান্ত নেন।

জানতে চাইলে নাইসের আইনজীবী মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত বাদীর বক্তব্য শুনেছেন। তবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আদালত কোনো আদেশ দেননি। আবেদনটি পর্যালোচনা করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা আশা করছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে মামলার আদেশ হবে।