হেলমেট ও মাস্ক পরে ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমানকে (৪৫) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত ইউপি চেয়ারম্যানকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জাহিদুর রহমান রানীনগর উপজেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক। হেলমেট ও মাস্ক পরে থাকায় হামলাকারীদের কেউ চিনতে পারেননি। এ নিয়ে গত দুই মাসে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় বিএনপির চার নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটল। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একের পর এক এসব হামলা চালানো হচ্ছে।

পারইল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাহিদুর রহমান কার্যালয়ে আসেন। তখন কিছু কাগজপত্র সই করাতে তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষে যান। ওই সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি বাবার মৃত্যুসনদ নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে আসেন। কিছুক্ষণ পর এক লোক মাস্ক পরে চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে মৃত্যুসনদ নিতে আসা ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কাজ হয়নি?’ ওই লোক বলেন, ‘না কাজ হয়নি।’ তখন মাস্ক পরে থাকা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তাহলে আপনি একটু পরে আসেন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কিছু পারসোনাল (ব্যক্তিগত) কথা আছে।’ তাঁর কথামতো মৃত্যুসনদ নিতে আসা ব্যক্তি বের হয়ে যান।

ইউপি সচিব তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এরপর হেলমেট ও মাস্ক পরা আরও ছয়-সাতজন লোক ওই কক্ষে প্রবেশ করে। তারা আমাকে চাকু ধরলে, আমি ভয়ে দৌড়ে চিৎকার করতে করতে বের হয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর লোকগুলা বের হয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে চলে যায়। তখন চেয়ারম্যানের রুমে গিয়ে দেখি, চেয়ারম্যানের পুরো শরীর রক্তাক্ত।’

পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জাহিদুর রহমানকে উদ্ধার করে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা চেয়ারম্যানের মুখমণ্ডল ছাড়া পুরো শরীরে কোপাইছে। তাঁর পিঠে, বুকে, পেটে একাধিক জায়গায় জখম রয়েছে। তাঁর ডান হাতের কবজিতে এমনভাবে কোপানো হইছে যে কবজিতে শুধু চামড়া লেগে হাতটা ঝুলে আছে।’

রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওবায়েদ বলেন, হেলমেট ও মাস্ক পরা কয়েক লোক কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করেছে। তাঁর পিঠে ও ডান হাতের কবজিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় মালিপুকুর বাজার এলাকায় বিএনপির কর্মী ও স্কুলশিক্ষক আবুল হোসেন এবং একই দিন রানীনগর উপজেলার কালিগ্রাম এলাকায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। গত ২৪ অক্টোবর রানীনগর বরগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে।

নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে বিএনপির নেতা–কর্মীরা যাতে অংশগ্রহণ না করেন, সে জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনও নীরব। পরপর চারটি ঘটনা ঘটল, কিন্তু এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে রানীনগর ও আত্রাই আবারও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হবে।’

এ বিষয়ে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, ‘সর্বশেষ ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনাসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকেই গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, এগুলো ব্যক্তিগত রেশারেশির কারণে ঘটনা ঘটতে পারে। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র কোনো নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলছে, তেমনটা মনে হচ্ছে না।’