বেলাবতে লালনশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় সাধুসঙ্গে আসা লালনসংগীতশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বেলাব থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী শিল্পী খোকন চিশতী। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর শেখকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত রোববার দুপুরে বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের ড্রাগনবাগানের এক কোণে গড়ে তোলা আশ্রমে বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল সকাল থেকে এ ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর শেখ (৩৫) বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য দুই আসামি হলেন একই গ্রামের শাহীন শেখ (৩২) ও ফজলু শেখ (৫৮)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও সাত থেকে আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, মামলা হওয়ার পরপরই অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার বাদী খোকন চিশতী বলেন, সুমন মিয়া নামের এক লালনভক্তের চল্লিশা আয়োজন উপলক্ষে সাধুসঙ্গ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওই আশ্রমে এসেছিলেন ১০ থেকে ১২ জন লালনসংগীতশিল্পী। রোববার দুপুরে শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান করছিলেন। ওই সময় স্থানীয় এক যুবক মদ্যপ অবস্থায় সেখানে গিয়ে উৎপাত শুরু করেন। পরে শিল্পীরা তাঁকে বাগানের বাইরে বের করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই যুবক কিছুক্ষণ পর তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হামলা চালিয়ে শিল্পীদের ব্যবহৃত অন্তত ২০টি বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। গুঁড়িয়ে দেওয়া বাদ্যযন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে হারমোনিয়াম, তবলা, একতারা, ডুগি, হাতবাড়া, খমক, দোতারা, সারিন্দা, গিটার ও বাঁশি।
পুলিশ বলছে, ঘটনা জানার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা মামলা করতে চাইছিলেন না। পরে গতকাল রাতে ভুক্তভোগী শিল্পী খোকন চিশতী মামলা করতে রাজি হন। জাহাঙ্গীর, শাহীন ও ফজলু নামের তিনজনকে চিনতে পারায় তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়। মামলা হওয়ার পর রাতেই আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পলিশ। পলাতক জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে, তাঁর বাড়িসংলগ্ন স্থান থেকে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ওই ড্রাগনবাগানের মালিক ও আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাহাঙ্গীর শেখ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা শিল্পীদের ব্যবহৃত সব বাদ্যযন্ত্র লাঠি-রড দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেওয়ার ঘটনার বিচার চান তিনি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোথাও হোক, তাঁরা চান না।