সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুরোপুরি নেভাতে জোয়ারের পানির জন্য অপেক্ষা
সুন্দরবন–পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তেইশের ছিলা এলাকার আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে মাটির ওপর শুকনা পাতায় মাঝেমধ্যেই উঠছে ধোঁয়া; জ্বলে উঠছে আগুন। সেখানে আগুন নেভাতে কাজ করছে বন বিভাগের ২০টি ও ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট।
এদিকে আজ সোমবার সকালের পর ভাটায় ভোলা নদীর পানি নেমে গেছে। ফলে পানি ছিটানো যাচ্ছে না। পানি দিতে নতুন করে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করছে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। তবে যেখানেই আগুন বা ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
গতকাল রোববার সকালে তেইশের ছিলা এলাকায় আগুন লাগে। বন বিভাগ ভিটিআরটি, সিপিজিসহ স্থানীয়দের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রথমে বনের মধ্যে ফায়ারলাইন কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করার চেষ্টা করা হয়। বিকেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে নদী থেকে ওই এলাকার দূরত্ব ও দুর্গম পথের কারণে সেখানে পাইপ নিতে রাত হয়ে যায়। রাতে পানি দেওয়া শুরু হলে দীর্ঘ পথের কারণে পানির গতি ছিল কম। সেই সঙ্গে ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যে পানি ছিটানো বন্ধ রাখতে হয়। আজ সকালেও সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছিল। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ভাটার কারণে পানি ছিটানো যাচ্ছে না।
আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ড্রোনের মাধ্যমে ওই এলাকা পর্যবেক্ষণ করছে বন বিভাগ। আজ নতুন করে কোথাও ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন–পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, তবে বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া আছে। কোথাও আগুন দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নেভাতে চেষ্টা চলছে। এই মুহূর্তে পাম্প দিয়ে পানি দেওয়া যাচ্ছে না। এখানে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। ভাটার সময় নদীতে পানি একদম শুকিয়ে যায়।
কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম জানান, অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বন বিভাগের পাম্প, পাইপসহ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। সুন্দরবন–পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের ২০টি ইউনিট ছাড়াও সিপিজি ও ভিটিআরটি দলের সদস্যরা কাজ করছেন। আগুন নতুন এলাকাতে ছড়ানোর তেমন শঙ্কা নেই। জোয়ার এলে আবার পানি দিতে পারলে আগুন সম্পূর্ণ নেভানো যাবে।
এর আগে গত শনিবার ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী এলাকার টেপর বিল এলাকায় আগুন লাগে। গতকাল সকালে সেখানকার আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আসে। আগুন কতটা এলাকায় ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি বন বিভাগ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আগুনে পাঁচ একরের বেশি বনভূমির গাছপালা পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) আবু বক্কর জামান বলেন, সুন্দরবনের আগুন নেভাতে খুলনা ও বাগেরহাটের ১০টি ইউনিট একযোগে কাজ করছে। পানির উৎস দূরে থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপর নদীতে জোয়ার–ভাটার একটা ব্যাপার রয়েছে। জোয়ার–ভাটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে। আগুন যাতে বিস্তৃত হতে না পারে, সে জন্য আগুনের স্থানের চারপাশে ফায়ারলাইন করা হয়েছে।
তিন সদস্যের আরও একটি কমিটি
এদিকে চাঁদপাই রেঞ্জের তেইশের ছিলার শাপলার বিল এলাকায় আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দিপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ। ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সুন্দরবনের কলমতেজী এলাকার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়ও এর আগে গতকাল চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়।