পঞ্চগড়ে দিনে গরম রাতে ঠান্ডা, সচেতন থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের
হেমন্তের শুরুর দিকেই দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছিল শীতের আবহ। বর্তমানে দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা অনুভূতির এই জনপদে দিন দিন নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। রাতভর ঝরতে থাকা কুয়াশা থাকছে সকাল পর্যন্ত। যেন আগাম বার্তা দিচ্ছে হাড়কাঁপানো শীতের।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় পঞ্চগড় জেলায় প্রতিবছর শীতের আগমন ঘটে কিছুটা আগেভাগে, আর শীত বিদায়ও নেয় দেরিতে। আজ শনিবার অগ্রহায়ণের শুরুর দিনে সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয়। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে। সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। জেলাজুড়ে রাতভর ঝরতে থাকা ঘন কুয়াশা ছিল সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
সকালে সাইকেল নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া জসিম উদ্দিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘সকালে কুয়াশায় কিচ্ছু দেখা যায় না। কাপড়চোপর আর চোখের ভুরু সব কুয়াশাতে ভিজে গেইছে। কিন্তু কী করিবেন, হামরা গরিব মানসি কাজোত তো যাবায় নাগিবে।’
গত রোববার থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টানা ছয় দিন তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে। তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। তবে দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় বেড়ে যাচ্ছে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এক সপ্তাহে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। দিনে রোদের কারণে গরম অনুভূত হলেও রাতে অনুভূত হচ্ছে শীত। এতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় শীতজনিত রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
বর্তমানে দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা থাকায় মানুষের মধ্যে শীতজনিত সর্দিকাশিসহ বিভিন্ন রোগের দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে যত্ন নিতে হবে। এ ছাড়া ধুলাবালু আর কুয়াশা থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
আজ সকালে পঞ্চগড় জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর ঝরতে থাকা কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। গাছের পাতা, পাকা ধানের পাতা ও ঘাসের ওপর থেকে ঝরছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালবেলা সড়কের যানবাহনগুলো চলেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশার মধ্যেই কর্মজীবী মানুষ ছোটেন কাজের সন্ধানে।
সকাল ৮টায় পঞ্চগড় পৌরসভার জালাসী এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক আইজুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইজকা রাতিত ভালোয় ঠান্ডা লাগিছে। আইজ কুয়াশা খুপে বেশি। সকালে তো ১০ হাত দূরোতো দেখা যায় না। এইবার শীত চলে আইচ্চে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। তবে দিনের বেলা রোদ থাকায় দিন ও রাতের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ সকালে কুয়াশার পরিমাণ ছিল বেশি। এখন থেকে দিন দিন তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা কমতে থাকবে।