সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, তবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে
সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। নদীর পানি কমছে। তবে পানি ধীরে কমায় মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘ হচ্ছে।
চার দিন পর সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। তবে এখনো জেলায় অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি আছে। প্রায় ২৫ হাজার পরিবার আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, গত দুদিন সুনামগঞ্জে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হয়েছে। এতে পাহাড়ি ঢল কম নামছে। মূলত এ কারণেই নদীর পানি কমছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আপাতত পরিস্থিতি অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।
পাউবোর তথ্যমতে, গত রোববার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সোমবার একই সময়ে পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। চার দিন পর আজ শনিবার সুরমা নদীর পানি এখানে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৭০ মিটার যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে আছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়নি।
জেলার উঁচু এলাকায় পানি কমলেও নিচু এলাকায় পানি এখনো স্থির হয়ে আছে। ছাতক, সদর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় অসংখ্য বাড়িঘরে এখনো পানি আছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত আছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী প্রায় ৮ লাখ মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।
দুর্ভোগ বাড়ছেই
সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। প্রথম দিকে সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা আক্রান্ত হলেও পরে জেলার সব উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ছয় দিন ধরে মানুষ দুর্ভোগে আছেন। দিন যত যাচ্ছে পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি তত বাড়ছে। অনেকের ঘরে খাবারের সংকট আছে।
জেলার ছাতক, সদর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় মানুষ দুর্ভোগে আছেন বেশি। পাহাড়ি ঢল নেমে প্রথমেই আঘাত হানে এই দুই উপজেলায়। ছাতক এক সপ্তাহ ধরে বন্যা কবলিত। এখনো জেলার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে।
সুনামগঞ্জ শহরে অনেক মানুষের বসতঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি আছে। যাঁদের বসতঘরে পানি, তাঁরা আছেন বেশি কষ্টে। অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। কেউবা পরিবার নিয়ে উঠেছেন হোটেলে। আবার কেউ কেউ আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
শহরের উকিলপাড়ার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ ইয়াসিনুর রশিদ বলেন, গত দুই দিনে পানি কমেছে। তবে পানি ধীরে কমছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে। ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।