চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা কানে তুলছেন না কেউ
চট্টগ্রামে তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য জারি হয়েছে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা। তবে সতর্ককতা আমলে নিচ্ছেন না কেউ। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে একটানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি ভয় ধরাতে পারছে না পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের। প্রশাসনের সতর্কবার্তা কানে তুলছেন না তাঁরা।
পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোয় মাইকিং চালানো হচ্ছে। তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু গত তিন দিনে একজন লোকও আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি। ফলে পাহাড়ধস হলে প্রাণহানির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে নগরের লালখান বাজার টাংকির পাহাড় এলাকায় দেখা যায়, প্রতিটি পরিবার পাহাড়ের পাদদেশ এবং খাঁজে গড়ে ওঠা বাসায় বসবাস করছে। এখানকার বাসিন্দাদের জন্য লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যেও বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাননি।
টাংকির পাহাড় এলাকায় কথা হয় জাবেদ নামের এক যুবকের সঙ্গে। তিনিও পাহাড়ের খাঁজে একটা টিনের ঘরে থাকেন। নিরাপদ আশ্রয়ে যায়নি কেন, এমন প্রশ্নে জাবেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে ঝুঁকি নেই। পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে না।’
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির হিসাবে চট্টগ্রাম নগরের ২৬ পাহাড়ে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে নগরের কাট্টলী ভূমি সার্কেলে। আকবরশাহ থানাধীন ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়গুলো এই সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। এখানেই বেশি পরিবারের বসবাস। কিন্তু পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো ওখানে বসবাস করছে।
জানতে চাইলে কাট্টলী ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহখানেক ধরে মাইকিং চলছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে। নিরাপদে সরে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তবে কেউ সরেননি বলে জানান আরাফাত সিদ্দিকী। তিনি বলেন, কঠোর হয়নি বলে হয়তো কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।
এদিকে আজ সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়েছে। নিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা থাকায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে রাস্তাঘাটে পানি জমে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী ও যাত্রীরা।
আজ সকালে নগরের জিইসি মোড়ে সড়কের এক পাশে হাঁটুসমান পানি জমে থাকে। এতে গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সকালের বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়টিতে এভাবে পানি জমে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য অনেকেই বিকল্প সড়ক ব্যবহার করেন। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি সময় লাগে তাঁদের। এ ছাড়া সকালের বৃষ্টিতে নগরের পাঁচলাইশে সড়কে পানি জমেছে।
নগরের প্রবর্তক মোড়ে একটি বেসরকারি অফিসে কর্মরত নাসরিন আক্তার বলেন, তাঁর বাসা নগরের জাকির হোসেন সড়কের ওয়ারলেস এলাকায়। প্রতিদিনের মতো বাসা থেকে অফিসে আসছিলেন। কিন্তু জিইসি মোড়ে এসে দেখেন হাঁটু পরিমাণ পানি। তখন রিকশা নিয়ে অন্য সড়ক ব্যবহার করে আসতে হয়েছে।
জিইসি মোড়ে পানি জমে থাকার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জিইসি মোড়ে সিটি ব্যাংক প্রান্ত থেকে সেন্ট্রাল প্লাজা পর্যন্ত সড়কের নিচে প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি নালা রয়েছে। সড়কের নিচে থাকায় নালাটি নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। পরিষ্কার করতে না পারায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরেও একই অবস্থা হয়েছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সতর্কবাণী দিয়েছিল। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদের সই করা সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আগামী শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এই সময় প্রতিদিন ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার এবং ২৮৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।