১০ দিনে ৮ বার মূল্যবৃদ্ধি, খুদে বার্তায় নির্ধারণ হয় ডিমের দাম

পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে ডিম। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারেফাইল ছবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন বাজারের ডিমের দাম। আর সেই দামের সঙ্গে মিল রেখে চট্টগ্রামের বাজারে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি মুঠোফোনেও খুদে বার্তার মাধ্যমে দাম জানানো হয়। গত ১০ দিনে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে ৮ বার। দাম বেড়েছে প্রায় ২ টাকা ৬০ পয়সা। এর ফলে খুচরা বাজারেও ডিমের দাম বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রোববার চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১১ টাকা ৬০ পয়সায়। আর খুচরা বাজারে দাম ছিল ১২ থেকে ১৩ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম বর্তমানে ১৪৫ টাকার আশপাশে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের সরবরাহ থাকলেও ‘মেসেজ’ করে ডিমের দাম জানিয়ে দেওয়ায় বাজারে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা বিভিন্ন গ্রুপ রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ডিমের দাম জানিয়ে দেয়। এতে ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ান। কোনো রসিদ থাকে না তাঁদের কাছে। লেনদেন হয় খুদে বার্তায় পাঠানো ‘ডিজিটাল রসিদে’।

দোকানিদের অভিযোগ, চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থান থেকে ডিম আসে। আগের রাতে ডিম পাঠিয়ে দেওয়া হলেও এর সঙ্গে কোনো রসিদ দেওয়া হয় না। দাম জানানো হয় মুঠোফোনে। এর পাশাপাশি সম্প্রতি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপেও ডিমের দাম জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডিমের বাজার এখন অস্থির।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর বলেন, ডিমের দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ মুঠোফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খুদে বার্তা। এক এলাকায় দাম বাড়লে তা এসবের মাধ্যমে দেশের সব বাজারে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

১০ দিনে মূল্যবৃদ্ধি ৮ বার

২ মে পাইকারি বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ছিল ৯ টাকা। পরের তিন দিনে তিন দফা দাম বেড়ে ৫ মে প্রতিটি মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয় ১০ টাকা ৩০ পয়সা। পরের দুই দিন দাম ২০ পয়সা কমেছিল। তবে এরপর প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ পয়সা বেড়ে দাম ঠেকেছে ১১ টাকা ৬০ পয়সায়।

এর জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা; পাশাপাশি মুঠোফোন ও ফেসবুকের খুদে বার্তাকেও দায়ী করছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রসিদ ছাড়া কেবল খুদে বার্তার মাধ্যমে বাজার চলছে। ক্রয়-বিক্রয়মূল্যের মূল্য সাধারণ ক্রেতাদের কাছে স্পষ্ট নয়। ফলে দাম কমলেও তা জানতে পারছে না ক্রেতারা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে, অন্তত ১০ থেকে ১২টি ফেসবুক পাতা ও গ্রুপ থেকে ডিমের দর জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু দাম জানানোর জন্য এসব দেওয়া হলেও এসবের ফায়দা নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ‘রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিমের বাজার’, ‘ডিমের বাজার’, ‘রংপুর পোলট্রি খামার’, ‘প্রতিদিনের ডিম ও মুরগির বাচ্চার দর’ নামের কিছু ফেসবুক পাতায় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে দাম।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ডিমের দাম কম ছিল মাসের শুরুতে। তবে কয়েক দিন আগে রংপুর ও রাজশাহীতে ডিমের দাম বাড়ছে—এমন কিছু পোস্ট করা হয় ফেসবুকের পাতায়। এরপর পর চট্টগ্রামের বাজারেও একই দামে মজুত করা ডিম বিক্রি হয়।

জরিমানায় সীমাবদ্ধ প্রশাসন

ডিমের বাজারে খুদে বার্তার বিষয়টি বেশ কয়েকবার নজরে এসেছে প্রশাসনের। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে অভিযানে গিয়ে গত বছর আগস্ট মাসেও কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে শুধু জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ প্রশাসন।

জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম বিভাগ) উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে অভিযান চলমান। ডিমের বাজারে এর আগেও রসিদ ছাড়া লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

এ ব্যাপারে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ধরনের রসিদ ছাড়া লেনদেন করা মানে সেখানে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লাভের চেষ্টা করছেন। ডিমের মতো নিত্যপণ্যেও তাঁরা ছাড় দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।