কুলিয়ারচরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের তিন মামলা, আসামি ৩ হাজার ৬২৭ জন
অবরোধের প্রথম দিনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। তিন মামলায় ৩ হাজার ৬২৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে বিএনপির দুই নেতা মারা যাওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
তিনটির মধ্যে দুটি মামলার প্রধান আসামি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপসাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ জোন) মো. শরিফুল আলম। কুলিয়ারচর থানার জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক (সেকেন্ড অফিসার) দেব দুলাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপির দাবি, অবরোধের সমর্থনে সকাল আটটার দিকে ছয়সূতি ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাওয়ামাত্র পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা করে, পরে গুলি ছোড়ে। এতে অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। পরে দুজন মারা যান। তাঁরা হলেন উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রিফাত উল্লাহ (২২) ও একই ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি বিল্লাল মিয়া (২৮)।
পুলিশের দাবি, মিছিলকারীরা লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার উদ্দেশে এগিয়ে এলে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে তারা শটগানের গুলি ছোড়ে। কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মস্তুফা বলেন, ‘আমরা সংখ্যায় ছিলাম ১৫ জন। কোনোভাবেই নিজেদের আর রক্ষা করতে পারছিলাম না। শেষে বাধ্য হয়ে শটগানের গুলি ছুড়তে হয়।’ এ ঘটনায় ওসিসহ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল মান্নান ও সাকিকুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, নিহত ব্যক্তিরা পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।
থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়। এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ৪৩ জন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ১ হাজার ৬০০ জনকে। একই ঘটনায় অপর মামলাটি হয় সন্ত্রাস দমন আইনে। এ মামলাতেও আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৬৪৩। দুই মামলার বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) তারেক পারভেজ।
এই দুটি মামলার প্রধান আসামি জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম। ২ নম্বর আসামি উপজেলা যুবদলের সভাপতি আজহার উদ্দিন ও উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. জুয়েল।
এসআই তারেক পারভেজ বলেন, বিএনপির কয়েক শ নেতা–কর্মী পুলিশের ওপর মিছিল নিয়ে এসে হামলা করেন। হাতে ছিল লাঠি, দা ও আগ্নেয়াস্ত্র। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে মারধর করা। হামলায় অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন। এই কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়।
একই দিন উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের বাজরা বাসস্ট্যান্ডে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। বিএনপির কর্মী–সমর্থকেরা পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং হামলা চালান। সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটির বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) নূরে আলম। এই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি রাখা হয় ৪১ জনকে। প্রধান আসামি উপজেলার রামদি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাফি উদ্দিন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ৩০০ জনকে।
দলীয় সূত্র জানায়, অবরোধের প্রথম দিনের ঘটনায় একাধিক মামলা হচ্ছে, নেতা-কর্মীরা এমনটি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। এমন আশঙ্কা থেকে বুধবার বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছিলেন সতর্ক। ফলে অবরোধের দ্বিতীয় দিন এবং কিশোরগঞ্জের আধা বেলা হরতাল ঘোষণার পর নেতা-কর্মীরা তেমন বাইরে বের হননি, পিকেটিং হয়নি। নিহত দুই নেতার বিষয়ে দল আইনিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, তা–ও জানা যায়নি।
দুই মামলার প্রধান আসামি ও বিএনপির নেতা শরীফুল আলম বলেন, ‘গুলি খেলাম আমরা। মরল আমার লোক। আবার আমরা হলাম আসামি। তা–ও আবার একটি দুটি না, তিনটি মামলা। এই এক আজব পুলিশ। এই পুলিশ আওয়ামী লীগের, কখনোই জনগণের হবে না। তবে মামলার সংখ্যা যতই হোক, রাজপথ ছাড়ব না।’
থানার জ্যেষ্ঠ উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেব দুলাল বলেন, ‘আমাদের মামলার মধ্যেই দুজনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ আছে। তবে পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।’