বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। আবেদনে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিফাত ও তাঁর অনুসারীদের হুমকির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও মহিউদ্দীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী। অন্যদিকে, বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়। ওই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন অমিত হাসান ওরফে রক্তিম ও ময়িদুর রহমান ওরফে বাকি। নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা ওই চার শিক্ষার্থী অমিত হাসানের অনুসারী।
আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইরাজ রব্বানী, রসায়ন বিভাগের সাইমুন ইসলাম, বাংলা বিভাগের সাব্বির হোসেন ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রাব্বি খান।
তাঁদের অভিযোগ, বেশ কয়েকজন ছাত্র ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ক্যাম্পাসে খুঁজছেন। এ জন্য নিরাপত্তাহীনতায় তাঁদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে। এমনকি ক্যাম্পাসে প্রবেশ, ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়াও তাঁদের জন্য ভীতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ২০ জুলাই থেকে বেশ কয়েক দিন ধরে ক্লাস চলাকালে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহিউদ্দীন আহমেদসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী তাঁদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে খোঁজাখুঁজি করেন। এ ছাড়া আরও কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিপক্ষরা তাঁকে হেয় করতে এমন মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ দিয়েছেন। কারণ, যাঁরা অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁরা শিক্ষাকার্যক্রমে স্বাভাবিকভাবেই অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা নিয়মিত ক্লাস করছেন, পরীক্ষা দিচ্ছেন—এমন প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে। কাউকে খোঁজার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ক্যাম্পাসের পরিবেশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ছাত্রলীগের নামে একটি পক্ষ সক্রিয় ছিল; সেটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের পক্ষ। তারাই ক্যাম্পাসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। গত এক বছর ক্যাম্পাসে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী রক্তিম-জিহাদ গ্রুপ নতুন করে সক্রিয় হয়। প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রের অনুসারীদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদ্যাপন করে দুটি পক্ষ। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর পর থেকেই দুটি পক্ষই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নামে সক্রিয় আছে।
দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম সংঘাতের সূচনা হয় গত ৫ জুলাই রাতে। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হন। এরপর পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির পর ২০ জুলাই ক্যাম্পাস খুললেও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে আসছেন না। মূলত মেয়রের অনুসারীদের হামলার আশঙ্কায় তাঁরা ক্যাম্পাসে আসছেন না।
এ বিষয়ে অমিত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভয়ে ক্যাম্পাসে যাচ্ছি না—বিষয়টি এমন নয়। ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাস খোলার দিন অন্য পক্ষ বহিরাগতদের নিয়ে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ জন্য ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা সংঘাতে যাইনি। এরপর আমাদের অনুসারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হুমকি ও অস্ত্র নিয়ে খোঁজাখুঁজি করা হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, চার শিক্ষার্থীর আবেদনের পর গত সোমবার তাঁদের ডেকে কথা বলেছেন তাঁরা। ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তাঁরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা অন্য কোনো কাজে যুক্ত থাকা অবস্থায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রশ্ন নেই তাঁদের। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আবেদনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।