মেয়েকে দা দিয়ে কুপিয়ে পালালেন বাবা
গাছ থেকে কাঁঠাল পাড়তে যান মেয়ে। সেখানে বাবার সাঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় তাঁর। একপর্যায়ে কাঁঠালগাছের নিচে দা দিয়ে কুপিয়ে নিজের মেয়েকে হত্যা করে দৌড়ে পালিয়ে যান বাবা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার চাদপুর ইউনিয়নের ধরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্মৃতি আক্তার (২৬) ওই গ্রামের মো. সারফুদ্দিনের (৬০) মেয়ে এবং পাশের কালীগঞ্জ উপজেলার ধুবুরিয়া গ্রামের দুবাইপ্রবাসী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর পাঁচ বছর বয়সী সিনহা আক্তার নামের এক মেয়ে ও তিন বছর বয়সী মো. আয়ান নামের এক ছেলে আছে।
স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত স্মৃতির মা বাদী হয়ে একই দিন দুপুরে কাপাসিয়া থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
নিহত স্মৃতির মা ছালেমা বেগম বলেন, সকাল ১০টার দিকে তিনি মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পাশে নিজেদের কাঁঠালগাছ থেকে কাঁঠাল পাড়তে যান। এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সারফুদ্দিন। তিনি মেয়েকে কাঁঠাল পাড়তে বাধা দেন। এ নিয়ে বাবা ও মেয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর মধ্যে দুটি কাঁঠাল নিয়ে ছালেমা বাড়িতে চলে যান।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মেয়ের চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখেন, হাতে থাকা দা দিয়ে মেয়েকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছেন সারফুদ্দিন। তিনি চিৎকার দিয়ে ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে সারফুদ্দিন মেয়েকে কুপিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। দায়ের কোপে তাঁর মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ছালেমা বেগম আরও বলেন, তাঁর স্বামী ভবঘুরে। এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছেন। বাড়িতে খুব কম থাকেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে এলেও পরিবারের সবার সঙ্গে ঝগড়া করে চলে যান। ২০ দিন ধরে তিনি বাড়ির পাশের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে থাকছেন।
কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, সারফুদ্দিন একাধিক বিয়ে করায় সংসারে অশান্তি ছিল। নিহত স্মৃতি আক্তার তাঁর প্রথম স্ত্রীর সন্তান। সম্প্রতি তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু তালাক দিলেও স্ত্রী স্বামীর বাড়িতেই থাকছেন। একাধিক বিয়ে করায় তাঁদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ ছিল। বৃহস্পতিবার কাঁঠাল পাড়াকে কেন্দ্র করে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বাবা তাঁর মেয়েকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। দায়ের কোপে স্মৃতির গলা ও মাথায় নিচে মারাত্মক জখম হয়।
নিহত স্মৃতি আক্তারের চাচা বাবুল খান বলেন, সারফুদ্দিন চারটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী ছালেমা বেগম পৈতৃক জমি বিক্রি করে ব্যবসার জন্য স্বামীকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই টাকা নষ্ট করেছেন। এর মধ্যে দুই বছর আগে কথা–কাটাকাটির জেরে ছালেমাকে তালাক দেন তিনি। তবে পৈতৃক জমি বিক্রির টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ছালেমাকে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন ওই বাড়িতেই থাকতে পরামর্শ দেন। তিনি স্বামীর বাড়িতে থাকলেও তাঁর স্বামী অন্য স্ত্রীদের সঙ্গে থাকেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন।
স্মৃতি আক্তারের ছোট ভাই রবিউল হাসান জানান, গত ঈদে স্মৃতি আক্তার তাঁর সন্তানদের নিয়ে তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এত দিন ধরে বাবার বাড়িতেই ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর অন্য বোনেরাও বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। স্মৃতি আক্তার তাঁদের জন্য কাঁঠাল পাড়তে গেলে বাবার সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর মিয়া বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় প্রথম আলোকে বলেন, বাবা মেয়েকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছেন। নিহত স্মৃতির লাশ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।