চুয়াডাঙ্গায় আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে কাবু জীবন

চুয়াডাঙ্গায় আজ মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশায় যানবাহনগুলো সকাল আটটার সময়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছিল। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনেছবি: শাহ আলম

চুয়াডাঙ্গায় আজ মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি শীত মৌসুমে তিন দফায় পাঁচ দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর আজ থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়া ও উত্তর থেকে ধেয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে আসায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

শৈত্যপ্রবাহের কারণে জেলার সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সদর হাসপাতালে হৃদ্‌রোগ ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে গত ৯ দিনে নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে জেলায় এটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১২ জানুয়ারি জেলার ওপর দিয়ে প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এদিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একটানা আরও দুই দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। দ্বিতীয় ধাপে ১৭ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তৃতীয় ধাপে ২২ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক তাহমিনা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সে হিসাবে আজ চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের প্রথম মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে।

চুয়াডাঙ্গার ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড এবং শিশু ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ২৬ জন মারা গেছেন। পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৩ জন ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ১০ জন মারা গেছেন। শিশু ওয়ার্ডে ৩ শিশু মারা গেছে।

সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট আবুল হোসেন পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ২৩ জন রোগীর মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রোগীদের প্রায় সবাই হৃদ্‌রোগ ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। প্রতিবছর শীতকালে এ দুই রোগই বেশি দেখা দেয়। হার্ট অ্যাটাক, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে পানি জমে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বা চিকিৎসাধীন শিশুদের বেশির ভাগই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। তিনি বলেন, মায়ের গর্ভে ৩৭ সপ্তাহ থাকার পর সন্তান জন্ম নেওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের আগে সন্তান জন্ম নিলে তাকে প্রি-ম্যাচিউর বাচ্চা বলা হয়ে থাকে। প্রি-ম্যাচিউর শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে শীতের সময় অনেক ঝুঁকিতে থাকে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি থাকে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশির ভাগই হাঁপানি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন।