দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন ১২ নভেম্বর

কক্সবাজারে ঝিনুক আদলে নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। আজ সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেললাইন আগামী ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে প্রস্তুত হয়েছে কক্সবাজারের ঝিলংজায় নির্মিত দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। আজ সোমবার বিকেলে এই রেলস্টেশন পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।

পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ২ নভেম্বর নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আর ১২ নভেম্বর এই রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে এই রেললাইন মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। মাতারবাড়ী যুক্ত হবে কক্সবাজার রেলপথের সঙ্গে।

এর আগে সকালে মন্ত্রী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ ও রেললাইন পরিদর্শন করেন। সেখানে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ২ নভেম্বরের আগে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হয়ে যাবে। আর ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

দুপুরে রেলমন্ত্রী দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শন এবং ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ট্রলিযোগে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে রেললাইন দেখতে দেখতে বিকেলে পৌঁছান কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে।

রেলমন্ত্রী বলেন, শিগগিরই রেল আসবে কক্সবাজারে। প্রধানমন্ত্রী ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। কক্সবাজারের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি রেলযোগাযোগ স্থাপন হলে পর্যটনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে মোট প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

কক্সবাজারে ঝিনুক আদলে নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। আজ সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও তার আগে আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এ রেলপথের দূরত্ব হচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে পাহাড় ও নদীপথ দিয়ে পর্যটননগর কক্সবাজার পর্যন্ত এই রেললাইন চলে গেছে। কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনসহ সব মিলিয়ে নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে রেলপথটিতে। ছয়টি স্টেশনের কাজ অক্টোবরে শেষ হবে। বাকিগুলোর কাজ ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে।

প্রস্তুত আইকনিক রেলস্টেশন
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে ঝিলংজা এলাকায় ২৯ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে ছয়তলা ভবনের আইকনিক রেলস্টেশন। ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুট আয়তনের এই রেলস্টেশন ভবন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা।

ঝিনুক আদলে তৈরি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই স্টেশনে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, লকার, শপিং মলসহ বিশ্বমানের সব সুবিধা। উদ্বোধন উপলক্ষে ভবনের চারপাশের রঙের শেষ আঁচড় লাগানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা চাইলে রাতের ট্রেনে ঢাকা থেকে সকালে কক্সবাজার পৌঁছে মালামাল লকারে রেখে সারা দিন সৈকত ঘুরে রাতের ট্রেনে পুনরায় ঢাকায় ফেরার সুযোগ পাবেন।

রেলস্টেশনের প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইকনিক রেলস্টেশন হতে যাচ্ছে। স্টেশনের সব কাজ শেষ, এখন উদ্বোধন উপলক্ষে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।

আইকনিক স্টেশন দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত মানুষ। তাঁরা তুলছেন ছবি ও ভিডিও চিত্র। মুহূর্তে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে।