ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, থমথমে ক্যাম্পাস
মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। গুরুতর আহত দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রাত ১টার দিকে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা কয়েকটি কক্ষ তল্লাশি করে। টাঙ্গাইল সদর থানার পরিদর্শক তদন্ত সাদিকুর রহমান জানান, হল থেকে কিছু লোহার পাইপ ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীলের ৩০ থেকে ৪০ জন অনুসারী মুখে গামছা বেঁধে জননেতা আব্দুল মান্নান হলে প্রবেশ করেন। তাঁরা তৃতীয় তলায় গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজির শিক্ষার্থী সোহানুর রহমানকে বেধড়ক পেটান। সোহানুরকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে জয় ধর নামের অপর এক শিক্ষার্থীকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা সোহানুরকে তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দেন। এতে সোহানুরের হাত-পা ভেঙে যায়। তাঁকে প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীরের পক্ষের মধ্যে মধ্যরাতে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে জননেতা আব্দুল মান্নান হলে হামলার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীরের অনুসারীরা শেখ রাসেল হল থেকে মান্নান হলে ছুটে আসেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী জয় ধর, সজীব শেখ, সৌরভ-১ ও সৌরভ-২-কে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সভাপতির অনুসারী রকি নামের এক শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আজ বেলা তিনটার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এতে বক্তব্য দেন গণিত বিভাগের ছাত্র প্রভাস দাস ও তাবরিজ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের মো. নাছিম, বিবিএর ছাত্র সাকিব প্রমুখ। বক্তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল বলেন, ‘জুনিয়রদের মধ্য থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। কী নিয়ে কী হলো তা বুঝতে পারছি না। আমি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনার খবর পেয়ে তা থামানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।’
সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বলেন, এ হামলার ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মীর মো. মোজাম্মেল হক জানান, এ ঘটনার বিষয়ে আজ সন্ধ্যায় ঢাকার অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভা হয়েছে। সেখানে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।