ফসলের মাঠে স্থানীয় উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে রাস্তা, ভোগান্তি কমবে কৃষকের

কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার দেওড়া গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ৬ জুন তোলাছবি: প্রথম আলো

বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। আশপাশে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। ঘরে ফসল তুলতে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই চলাচলের দুর্ভোগ কমাতে ১০ গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে দেড় কিলোমিটার সড়ক তৈরির কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দেওড়া গ্রামে সড়কটি তৈরি করা হচ্ছে। ফসলের মাঠের মাঝবরাবর দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। সড়কটি দেওড়া গুলগুইল্লা মার্কেট থেকে উপজেলার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে গিয়ে মিলেছে।

খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর ও আশপাশের ১০টি গ্রামের মানুষকে বরুড়া পৌর সদরে যেতে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। শিক্ষার্থীদের অনেক পথ মাড়িয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। এ ছাড়া ফসলের মাঠে চাষের জন্য ট্রাক্টর ও ফসল বাড়ি আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়। সড়কটি তৈরি হলে সবার উপকার হবে।

৬ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, কাঠফাটা রোদে অন্তত ৪০ জন সড়ক নির্মাণে কাজ করছেন। কারও হাতে কোদাল, কারও হাতে ঝুড়ি। ফসলের মাঠ থেকে মাটি কেটে সড়কে ফেলা হচ্ছে। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা কিছুক্ষণ পরপর জিরিয়ে নিচ্ছেন; পানি পান করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মজুরি ছাড়াই তাঁরা কাজ করছেন। গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা শ্রম দিতে পারছেন না, তাঁরা আর্থিক সহযোগিতা করছেন। অনেকে আবার সড়ক তৈরির জমি দান করেছেন।

গত ১৩ এপ্রিল সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন কাজ বন্ধ। বাকি কাজ ঈদের পর শেষ করা হবে।

সড়কটি নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা মোশারফ হোসেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা দিদারুল আলম, আবু তাহের, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। মোশারফ হোসেন বলেন, ‘একটি সড়কের জন্য দীর্ঘ বছর ধরে এলাকার লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বছর দুয়েক আগে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করি। সবাই মিলে সভা করি। গত ১৩ এপ্রিল সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন কাজ বন্ধ। বাকি কাজ ঈদের পর শেষ করা হবে।

মোশারফ হোসেন আরও বলেন, রাস্তাটি তৈরিতে ৪০ জন জমি দান করেছেন। কেউ শ্রম দিচ্ছেন; কেউ টাকা দিচ্ছেন। দেওড়া গ্রামের ৬০ জন সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিয়েছেন, যার পরিমাণ সাড়ে চার লাখ টাকা। এখন মাটি ফেলে কাঁচা সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসন বা অন্য কোনো জায়গা থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলে সড়কটি পাকা করা সম্ভব হবে। সড়কের দুই পাশে গাছের চারা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।  

দেওড়া গ্রামের ৬০ জন সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিয়েছেন, যার পরিমাণ সাড়ে চার লাখ টাকা। এখন মাটি ফেলে কাঁচা সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসন বা অন্য কোনো জায়গা থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলে সড়কটি পাকা করা সম্ভব হবে।
মোশারফ হোসেন, সড়ক নির্মাণকাজের উদ্যোক্তা

সড়ক নির্মাণে জমি দান করেছেন ওই এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও ইদ্রিস মিয়া। তাঁরা দুজন বলেন, সবার উপকারের জন্য জমি দিয়েছি। এই রাস্তা দিয়ে সবাই চলাচল করতে পারবেন।

জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেব আলী বলেন, দেওড়া থেকে জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী আসে। তাদের অনেক পথ ঘুরে আসতে হয়। সড়কটির কাজ শেষ হলে তারা কম সময়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারবে।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু এমং মারমা মং বলেন, ‘দেওড়া গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণের কথা শুনেছি। প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন তাঁদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করবে।’