স্থানীয় সংসদ সদস্যের মন পেতে মরিয়া প্রার্থীরা

(বাঁ থেকে) শহিদুল ইসলাম, মাসুক নাজিম ও মনিরুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর তিনজনই আওয়ামী লীগের পদ–পরিচয়ধারী। ভোটের আর মাত্র দুদিন বাকি। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে বিস্তৃর্ণ হাওরের আল ধরে ভোটারদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রার্থীরা।

চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। তাঁর প্রতীক কাপ পিরিস। তিনি উপজেলা পরিষদের টানা দুবারের চেয়ারম্যান। ঘোড়া প্রতীকে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ এফ মাসুক নাজিম। বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ ঢাকার খিলগাঁও থানার সভাপতি মনিরুজ্জামান মাঠে আছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। এ ছাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে চারজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুগত হিসেবে পরিচিত।

সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ ও তাঁর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মন পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত বাবা–ছেলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তাঁরা কারও পক্ষে হেলবেন না। ভোটে যিনি জয় পাবেন, তিনিই হবেন তাঁদের পছন্দের একজন। ফলে দলীয় নেতারা এখন অনেকটায় বিচ্ছিন্ন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী। ভোটের দিন এগিয়ে এলেও এখনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তিনি বলেন, এবার সংসদ সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রপতির সবুজ সংকেত কারও পক্ষে নেই।

সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, এই নির্বাচনে তাঁর কোনো পছন্দের প্রার্থী নেই। এমন আলোচনা মাঠে থাকার পরও প্রার্থীরা হাল ছাড়েননি। নানা প্রক্রিয়ায় মন পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন তাঁরা।

একই সূত্র জানায়, হাওরের জীবন–জীবিকার বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য আছে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রচারের ধরন ও ভোটার ভাবনায়ও। এবার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রথমত, ‘বর্ষায় নাও, আর গ্রীষ্মে পাও’-হাওরের বিচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে প্রচলিত এই প্রবাদের এখন পাও মৌসুম। উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে আদমপুর, খৈয়রপুর-আবদুল্লাহপুর ও কলমা ইউনিয়ন ছাড়া বাকী পাঁচটিতে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ফলে বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়া ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দ্বিতীয় কারণ, চেয়ারম্যান পদের তিনজনের কেউ হঠাৎ প্রার্থী নন। তাঁরা এলাকার রাজনীতি ও সমাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। জনসম্পৃক্তার কারণে ভোটারদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ কম। তৃতীয়ত, এবার হাওরে ফলন ভালো হয়েছে। আবার সমস্যা ছাড়া ফলন গোলায় তোলা গেছে। ভোটারদের মন ভালো থাকায় আনন্দ নিয়ে কেন্দ্রমুখী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। চতুর্থত, সংসদ সদস্যের পছন্দের প্রার্থী না থাকায় বিনা সংকোচে মতামত প্রকাশের সুযোগটি ভোটাররা হাতছাড়া করতে না–ও পারেন।
প্রার্থী মনিরুজ্জামানের আশা, ভোটাররা এবার কেন্দ্রমুখী হবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরই অধিক ভালো হবে। মাসুক নাজিমের আশা, দীর্ঘদিন পর পরিবর্তন আনার সুযোগ পেয়েছেন ভোটাররা। সুযোগটি কাজে লাগাতে ভুল করবেন না তাঁরা। আর এই কারণেই রায় তাঁর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

নৌকা ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা-জয় পাওয়ার বিষয়ে প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যখন নৌকা ছিল, তখন দলের অনেকে আমার সঙ্গে ছিলেন না। এবার নৌকা নেই, দলের সবাই আমার সঙ্গে আছেন।’নৌকা থাকায় নেতারা সঙ্গ ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে, তাঁর উত্তর, তখন দলে কিছুটা সমস্যা ছিল।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় চেষ্টা করেও সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

এই উপজেলায় ভোট ২১ মে। ৮ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত অষ্টগ্রাম উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৯।