নিখোঁজের ৩০ ঘণ্টা পর হাসপাতালের গোসলখানা থেকে রোগীর লাশ উদ্ধার
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের একটি গোসলখানা থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল সাতটার দিকে তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের গোসলখানায় বাবু ব্যাপারী (৪০) নামের ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বাবু ব্যাপারী বরিশালের মুলাদি উপজেলার তয়কা সেলিমপুর এলাকার আলী ব্যাপারীর ছেলে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে স্বজনেরা তাঁকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজ হন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তর জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রেখেছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও সদরের পালং মডেল থানা সূত্র জানায়, বরিশালের মুলাদি উপজেলার তয়কা সেলিমপুর এলাকার আলী ব্যাপারীর ছেলে বাবু ব্যাপারী অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বুধবার তাঁকে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভর্তি করা হয়। তাঁকে হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে ওই রোগী টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে শয্যা থেকে বের হন। এরপর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাবুর সঙ্গে থাকা তাঁর মা রোকেয়া বেগম (৮০) নার্সদের বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু তাঁরা বাবুকে খোঁজার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। রোকেয়া দিশাহারা হয়ে তাঁর ছেলেকে খুঁজতে গতকাল শুক্রবার গ্রামে ফিরে যান। তখন খবর পেয়ে তাঁর অন্য স্বজনেরা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন। তাঁরাও তাঁর কোনো সন্ধান পান না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও তাঁরা কোনো সহায়তা পাননি।
আজ সকালে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত মেডিসিন ওয়ার্ডের গোসলখানায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে নার্সদের জানান অন্য এক রোগী। তখন স্বজনেরা ওটা বাবুর লাশ বলে শনাক্ত করেন। দায়িত্বরত নার্সরা বিষয়টি পালং মডেল থানার পুলিশকে জানান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।’
আজ বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্না করছিলেন বাবুর বৃদ্ধ মা রোকেয়া বেগম ও তাঁর স্বজনেরা। রোকেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ছেলেটাকে খুঁজে না পেয়ে নার্সদের জানিয়েছি, কিন্তু তাঁরা খোঁজ করেননি। তাঁরা তাঁকে খুঁজতে সহযোগিতা করলে হয়তো আমার ছেলেটা মারা যেত না।’
বাবুর ভাবি রুনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শাশুড়ি বৃদ্ধ মানুষ। তিনিই বাবুকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে বাবু নিখোঁজ হয়। খবর পেয়ে আমরাও খুঁজেছি। কোথায়ও না পেয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের জানিয়েছি। কিন্তু তাঁরা কোনো সহযোগিতা করেননি। উল্টো আমাদের চাপ দিয়েছেন রোগী খুঁজে আনার জন্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার দেবরের মৃত্যু হয়েছে। এর বিচারও হয়তো আমরা পাব না।’
চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রোগীর হৃদ্রোগের সমস্যা ছিল। উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। হয়তো গোসলখানায় গিয়ে হৃদ্রোগের কারণে পড়ে গিয়েছিলেন। কেউ খেয়াল না করায় ওখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। আর প্রায়ই রোগীরা দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। এ ক্ষেত্রেও এমনটা ভেবে নিখোঁজের বিষয়টি হয়তো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যেহেতু হাসপাতালের গোসলখানা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেহেতু মনে হচ্ছে, যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের অবহেলা ছিল। তাই ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি করা হবে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর যাঁরা অবহেলা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দীন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে জানানোর পর গোসলখানা থেকে এক রোগীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য লাশ ময়নাতদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও কেউ করেননি।