বরিশাল নগর বিএনপির দুই নেতার বাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা
বরিশাল নগর বিএনপির বর্তমান ও সাবেক দুই নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার রাত আটটার পর নগরের কাউনিয়া প্রধান সড়ক এবং নাজিরের পুল এলাকায় হেলমেট ও মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে এ হামলা হয়েছে বলে বিএনপির নেতাদের একটি অংশ সন্দেহ করছে।
স্থানীয় ব্যক্তি ও বিএনপির ওই নেতারা জানান, গতকাল রাত আটটার পর নগরের কাউনিয়া এলাকায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম এবং নাজিরের পুল এলাকায় মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ আকবর হোসেনের বাড়িতে পরপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় আকবর হোসেন বাড়িতে ছিলেন না। দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়ির সামনের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে এবং পরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে খাবার ঘরে ভাঙচুর চালায়। এর আগে নগরের কাউনিয়া এলাকায় জহিরুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তিনিও বাড়িতেই ছিলেন। মোটরসাইকেলে আসা হেলমেটধারী দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়িতে দুটি মোটরসাইকেল ও বাড়ির অন্যান্য মালামাল ভাঙচুর করে।
প্রত্যক্ষদর্শী রুবেল হোসেন বলেন, নাজিরের পুল থেকে ১০-১২টি মোটরসাইকেলে হেলমেট ও মাঙ্কি টুপি পরিহিত দুর্বৃত্তরা কাউনিয়া প্রধান সড়কে জহিরুল ইসলামের খান ভিলা নামের বাড়িতে হামলা করে। তারা বাসার গেট ও ভেতরে প্রবেশ করে এবং দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলার সময় সবাই বিএনপির নেতা জহিরুলের নাম ধরে গালাগাল করছিল।
জহিরুল ইসলাম বলেন, হামলার সময় তিনি বাসায় ছিলেন। আকস্মিক হামলার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান আতঙ্কিত হন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আকবর হোসেন বলেন, হেলমেট পরে দেশি অস্ত্রে সজ্জিত কয়েকজন মোটরসাইকেলে এসে তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা বাড়ির সামনের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে এবং বাড়ির ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়।
ঘটনার নেপথ্যে কারণ কী—এমন প্রশ্নে আকবর হোসেন বলেন, ‘এখনো বুঝতে পারছি না। তবে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আছে।’
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। নগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির, সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম, আনোয়ারুল হক, মহসিন মন্টুসহ অন্য নেতা-কর্মীরা এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচার দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শনিবার রাতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক হালিম মৃধার ওপর হামলা হয়েছে। এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে আমরা তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে একটি প্রচার কর্মসূচি আহ্বান করেছি। এটা যাতে করতে না পারি, সে জন্য ভীতি সৃষ্টির জন্যই এমন হামলা হতে পারে।’
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল নিশাদ বলেন, ‘দুটি বাসায় প্রায় একই সময়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে কারও নাম বলতে পারেননি ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে নগরের রূপাতলীতে লিলি পেট্রলপাম্প–সংলগ্ন এলাকায় নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক হালিম মৃধার ওপর হামলা হয়। নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের ইন্ধনে তাঁর অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ হামলার বিচার দাবিতে রোববার নগরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন নগর বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা।
জিয়া উদ্দিন সিকদার অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, এটা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।