দুই বন্ধু একসঙ্গে সমাজসেবা করতেন, মারাও গেলেন একসঙ্গে
জুয়েল রানা ও নাসির উদ্দিনের বয়সের ব্যবধান থাকলেও তাঁরা ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজ করতেন। কারও বিপদ দেখলেই ছুটে যেতেন। প্রবাসী আরেক বন্ধুকে এগিয়ে দিতে একসঙ্গে গিয়েছিলেন ঢাকায়। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তাঁরা মারা যান। এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত দুই বন্ধুর এমন মৃত্যু গ্রামবাসী মেনে নিতে পারছেন না।
নিহত জুয়েল (২৫) টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার আন্দি গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে এবং নাসির (২২) একই গ্রামের আবদুস সবুরের ছেলে। তাঁদের সঙ্গে দুর্ঘটনায় আন্দি গ্রামের মসজিদের ইমাম মুসলিম উদ্দিনও (২৫) নিহত হন। তাঁর বাড়ি জেলার মধুপুর উপজেলায়। দুই বছর আগে ইমাম হিসেবে তিনি আন্দি গ্রামে এসেছিলেন
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তাঁরা নিহত হন।
আজ রোববার সকালে আন্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জুয়েলের বাড়িতে তাঁর মা ও স্বজনেরা বিলাপ করছেন। প্রতিবেশী অনেকে তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
জুয়েলের বন্ধু সাদমান সাদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ছোঁয়া নামের একটি সামাজিক সংগঠন আছে। জুয়েল ও নাসির সংগঠনের সদস্য। করোনার সময় থেকে সমাজের ভালো কাজের সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন। জুয়েল এবার সরকারি সা’দত কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স শেষ করেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে জুয়েল সবার বড় ছিল।’
জুয়েলদের বাড়ি থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে সামাজিক বনের ভেতর নাসিরদের বাড়ি। ছেলের মৃত্যুর খবরে বাবা আবদুস সবুরের অবস্থা পাগলপ্রায়। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা কি এসেছে?’ তখনো লাশ বাড়িতে পৌঁছেনি। প্রতিবেশী নারীরা ছাড়াও গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও নাসিরের মাকে দেখতে এসেছেন।
শিক্ষক সুলতানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুয়েল ও নাসিরকে আমি পড়িয়েছি। ওরা খুবই ভালো ছাত্র ছিল। সমাজের ভালো কাজের সঙ্গে সব সময় থাকত। ওদের মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না।’
গ্রামের কয়েকজন জানান, মসজিদের ইমামসহ মারা যাওয়া তিনজন ভালো মানুষ ছিলেন। সুখে-দুঃখে গ্রামবাসীর পাশে থাকতেন। তাঁদের মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সখীপুরের কালিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফজলুল হক বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই বন্ধুর লাশ গ্রামে এসে পৌঁছায়। এ সময় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির তৈরি হয়। গ্রামের মসজিদের ইমাম মুসলিম উদ্দিনের লাশ টাঙ্গাইলের মধুপুরের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুপুরে দেবলচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে লাশ দুটির জানাজা শেষে পৃথক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সখীপুরের আন্দি গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী মো. মামুন দুই বছর বিদেশে থাকার পর তিন মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন। ছুটি শেষে বন্ধুকে এগিয়ে দিতে গতকাল সন্ধ্যায় একটি প্রাইভেট কারে ঢাকায় যান নিহত জুয়েল ও নাসির। গাড়িতে চালকের সঙ্গে ইমাম মুসলিম উদ্দিনসহ দুই বন্ধু ছিলেন। মামুনকে রাতে বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে কালিয়াকৈরের সূত্রাপুর এলাকায় একটি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস নেওয়ার জন্য গাড়ি থামান। সেখান থেকে প্রাইভেট কারটি মহাসড়কে উঠতে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হন।