রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পঞ্চম দিনেও বিনোদপুর বাজার চালু হয়নি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় পঞ্চম দিনেও বিনোদপুর বাজার চালু হয়নি। বাজারের প্রায় সব দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের দু-একটি সবজির দোকান খুলেছে। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসচালকের তর্কাতর্কির জেরে নগরের বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষের সূত্রপাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং রাবার বুলেটে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের সময় একটি পুলিশ বক্স ও রাস্তার পাশের অন্তত ৩০টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সচল হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ও আড্ডায় ফিরেছেন। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কেও একই দিন যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল বিনোদপুর বাজার এখনো সরব হয়নি।
আজ বুধবার দুপুরে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। উত্তর পাশে পোড়া ও ভাঙাচোরা দোকানপাট পড়ে আছে। এক দোকানে দেখা যায় পুড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া ডাব ও তরমুজ পড়ে আছে। রাস্তার দক্ষিণ পাশে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য অবস্থান করছেন। ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকানগুলোর আশপাশে অবস্থান করছেন। বিনোদপুরের পশ্চিম পাশে সবজির কয়েকটি দোকান আজ থেকে চালু হয়েছে। এসব দোকানে খুব বেশি ক্রেতা নেই।
আমজাদ আলী ৩০ বছর ধরে বিনোদপুর বাজারে রাস্তার পাশে বাইসাইকেল মেরামতের কাজ করে আসছেন। ঘটনার দিন সংঘর্ষ হলে দোকান বন্ধ না করে চলে যান। রাতে শোনেন দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরের দিন এসে দেখেন, একটি ভাঙা সাইকেল হারিয়ে গেছে। আমজাদ আলী বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে কী যে সম্পর্ক তা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কয়দিন আসিনি। আজ এলাম। সকাল ৯টা থেকে মাত্র ২০ টাকার কাজ করতে পেরেছি। কোনো ছাত্র আসেনি।’ তাঁর প্রত্যাশা, খুব দ্রুত সম্পর্ক ভালো হবে।
রায়হান হোসেন পাঁচ দিন পর আজ প্রথম দোকান খুললেন। সংঘর্ষের দিন কোনোরকমে দোকান বন্ধ করে গিয়েছিলেন। এই কয়েক দিনে তাঁর দোকানে রাখা প্রায় সব কাঁচা সবজি পচে গেছে। আজ দুপুরে তিনি সেগুলো ফেলে দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ঘটনা হঠাৎ করে বড় হয়ে গেল। এই ঘটনায় সবার ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের যে সম্পর্ক ছিল, তা ঠিক হতে অনেক দিন লাগবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট–সংলগ্ন এলাকায় চুল–দাড়ি কাটার কাজ করেন সেন্টু দাস। তিনি কয়েক দোকানদারের সঙ্গে বিনোদপুরে বসে ছিলেন। সেন্টু বলেন, কয়েক মাস আগে রাস্তা সম্প্রসারণ কাজ করার কারণে দোকান ভেঙে ফেলা হয়। পরে আবার রাস্তার এক কোনায় দোকান খুলেছিলেন। কিন্তু সব পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন খুবই বিপদে পড়েছেন তাঁরা। দাড়ি কামানোর মতো জিনিসপত্র নেই। সব হারিয়ে গেছে।
বিনোদপুর বাজারের কয়েক ব্যবসায়ী মনে করছেন, এ ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁরা বেশির ভাগ পুলিশের হাতে আহত হন। বিনোদপুর বাজারের সব ব্যবসায়ী এই হামলায় অংশ নেননি। তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করেছে। ব্যবসায়ীরা এই মামলার ভয়ে আছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আগের মতো সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান।
বিনোদপুর বাজার সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাজারে প্রায় ৪০০ দোকান আছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা ক্ষতিপূরণ আসার পর সব দোকান খুলতে চাচ্ছেন। তাঁরা চান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা কিছু পাক। তাঁরা নিরীহ ব্যবসায়ী। তিনি আরও বলেন, তাঁদের ব্যবসা শিক্ষার্থীনির্ভর। তাঁরা চান শান্তিপূর্ণ সমাধান। সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে, তা আবার আগের জায়গায় আনতে চান। এ কারণে আলোচনা চালানোর চেষ্টায় আছেন তাঁরা।
নগরের মতিহার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, বিনোদপুর বাজারে দোকানপাট খোলার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নেবেন। পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অবস্থান করছে।