বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলাকালে কর্মকর্তাদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সংঘর্ষে আহত ১০ জন হলেন বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা তানজিম হাসান, সহকারী রেজিস্ট্রার তৌসিকুল ইসলাম, সেকশন অফিসার মাহমুদুল হাসান, মিজানুর রহমান ও আবু সায়েম এবং ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও পরিকল্পনা দপ্তরের উপপরিচালক আবু হাসান, প্রকৌশল দপ্তরের উপপ্রধান প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীন, অর্থদপ্তরের কর্মকর্তা ইকবাল মিয়া, সহকারী রেজিস্ট্রার আনোয়ার সাদাত ও উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদ উল্লাহ। তাঁদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সোমবার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম বর্জন করে ধর্মঘটে যায়। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ। গতকালও ওই কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মকর্তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। তাঁদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে পৃথক কর্মসূচি পালন করতে সেখানে আসে অপর পক্ষ।
এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচিতে বাধা দেন এবং তাঁদের ব্যানার ছিনিয়ে নেন। পরে আবারও ব্যানার ছাড়া ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচিস্থলের পাশেই অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার আনা হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আবারও বাধা দেন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান বলেন, কর্মকর্তাদের দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে।
ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও আহত মুরশীদ আবেদীন বলেন, ‘সরকারের পেনশন নীতিমালা নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছিলাম। এ সময় বাহাউদ্দিন গোলাপ, নজরুল, জুয়েল মাহামুদের নেতৃত্বে কতিপয় কর্মকর্তা আমাদের ওপরে হামলা চালিয়েছেন। চেয়ার, রড, লাঠি দিয়ে তঁরা হামলা করেছেন। এতে আমাদের ছয়জন আহত হয়েছেন, যাঁরা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
তবে এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন, ‘আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা একসঙ্গেই ছিলাম ও আছি। যাঁদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অনুমোদিত সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু সম্প্রতি সরাসরি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাওয়া গুটি কয়েক কর্মকর্তা ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।’
বাহাউদ্দীন গোলাপ আরও বলেন, এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতিগত ভেদাভেদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও একটি বিভেদ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এটি বুঝতে পেরে বিষয়টি আগে থেকেই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই সংগঠনের কোনো অনুমোদন দেয়নি।
ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘অনুমোদনহীন সংগঠনের ব্যানার নিয়ে আমাদের আন্দোলনস্থলে আসার পর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ামাত্র তাঁরা আকস্মিক হামলা চালালে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘যে বা যাঁরা দায়ী হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। তদন্ত অনুযায়ী এর সঠিক বিচার হবে। আমরা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হতে দেব না।’