প্রথম আলো: শৃঙ্খলা ভঙ্গের পরও কী কারণে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ আপনাকে ক্ষমা করল?
জাহাঙ্গীর আলম: দলে অনেক সময় ভুল–বোঝাবুঝি হয়। জন্মের পর থেকেই আমি আওয়ামী লীগ করি। আমাকে কেউ আওয়ামী লীগে নিয়ে আসেনি। আমি মনে করি, প্রথম পর্যায়ে দল আমাকে যে শাস্তি দিয়েছিল, তা ভুল–বোঝাবুঝির কারণে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আমার আদর্শের জায়গা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি শব্দটির ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমার যে কথায় বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেই কথা আমি কোন জনসভায়, কোন বক্তব্যে, কার কাছে বলেছি, তা যাচাই-বাছাই করা হয়নি। আংশিক কথা জোড়াতালি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রটানো হয়েছিল। তখন স্থানীয় একটি পক্ষ চেয়েছিল, আমি যাতে মেয়র পদে না থাকতে পারি। এক পক্ষের কথা শুনে আমাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে দলের কাছে আমি বিষয়টি বোঝাতে পেরেছি। এখন আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আশা করি, দল ও গাজীপুরবাসীকে নিয়ে এখন আমি ভালো কাজ করতে পারব।
প্রথম আলো: কোন প্রক্রিয়ায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলো? ক্ষমা প্রার্থনা করে আবেদন করেছিলেন নাকি কেন্দ্রীয় কমিটি স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছে?
জাহাঙ্গীর আলম: তাঁরা কীভাবে আমার বিষয়টি সমাধান করেছেন, তাঁরাই ভালো জানেন। শেখ হাসিনা ন্যায়বিচারক, তিনি আমার কাছে মায়ের মতো। তিনিই দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে আমার বিষয়টি সমাধান করেছেন। পরে আমাকে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছেন।
প্রথম আলো: শর্ত সাপেক্ষে আপনাকে ক্ষমা করার কথা বলা হচ্ছে। দলের কোন শর্তে ক্ষমা পেলেন?
জাহাঙ্গীর আলম: সব জায়গায় চিঠির একটি ভাষা থাকে। সেই নীতি থেকেই হয়তো লেখা হয়েছে। এটা তাদের ব্যাপার। আমি বলেছি, আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি এবং থাকব। অনেক সময় সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক বা বড় পদের দরকার হয়। আমি যদি একজন সমর্থক থাকি, তখন হারানো বা চাওয়া–পাওয়ার কিছু থাকে না। আমি দেশবাসীর জন্য কাজ করে যেতে চাই।
প্রথম আলো: বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাদের থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
জাহাঙ্গীর আলম: আমার বাড়িতে রাতেই হাজার হাজার মানুষ খবর পেয়ে চলে এসেছে। মানুষের এই আনন্দ আপনি টাকাপয়সা বা পেশিশক্তি দিয়ে পাবেন না। এখানে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে। আমি মেয়র ছিলাম, দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দু-একজন পক্ষে-বিপক্ষে থাকতেই পারে। এখানকার ৯৯ ভাগ লোক আমার পক্ষে। মাত্র ১ ভাগ মানুষ আমার বিপক্ষে। তাঁদের লোভনীয় জায়গা আছে। আমার জন্য পায় না বলে তারা চায় আমি যেন না থাকি।
প্রথম আলো: গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান বলেছেন, বহিষ্কার হয় দলে ফেরায় দুই বছর কোনো পদ–পদবি পাবেন না। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
জাহাঙ্গীর আলম: উনি আমার সিনিয়র, তাঁকে নিয়ে কোনো সমালোচনায় যেতে চাই না। কিন্তু উনি গঠনতন্ত্রের বাইরে কথা বলতে পারেন না। এটা অন্যায় বা অনিয়ম। অনিয়ম করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি একটি সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি একটা কথা বলবেন, আমি বিশ্বাস করি না। এরপরও ওনার মতামত দেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু না বুঝে মিথ্যা বা গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করব।
প্রথম আলো: গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আপনার মা মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় দলে ফেরা সহজ হয়েছে বলে আলোচনা আছে। আপনি কী মনে করছেন?
জাহাঙ্গীর আলম: সবকিছু মিলিয়েই তো মানুষ। আমার মাকে গাজীপুরবাসী মেয়র বানিয়েছেন। মায়েরটা একটা পার্ট, আমারটা একটা পার্ট। সেই হিসেবে আমরা যৌথভাবে, পারিবারিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পার্টিকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে জন্য আমার মা–ও কাজ শুরু করেছেন, আমিও করছি।
প্রথম আলো: রাজনীতি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
জাহাঙ্গীর আলম: আদর্শ, সততা ও যোগ্যতা থাকলে কোনো অপশক্তি ক্ষতি করতে পারে না, এটা আমি প্রমাণ করতে চাই। আমাকে দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এখন দল গোছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। রাজনীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে চাচ্ছি।
প্রথম আলো: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার প্রার্থী হওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
জাহাঙ্গীর আলম: এলাকার উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমি করব। একজন রাজনৈতিক আদর্শ কর্মীর সব দিক রক্ষা করতে হয়। আমি সব দিক রক্ষা করে গাজীপুরকে সুশৃঙ্খল রাখার জন্য যা প্রয়োজন, সবকিছুর জন্য আমি প্রস্তুত আছি।