শিক্ষার্থী ও বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে ৭ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন

কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গত জুলাই-আগস্টে কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা দায়ের করেছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাসদের নেতা–কর্মীরা। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা এসব মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। গত ৩০ অক্টোবর কক্সবাজার আদালতে প্রতিবেদনগুলো দাখিল করা হয়।

মামলায় এজাহারনামীয় ৩২১ জন ও অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। সাতটি মামলার মধ্যে ছয়টি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ও একটি চকরিয়া থানায় করা হয়। গত ৩ আগস্ট পর্যন্ত এসব মামলায় পুলিশ ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮৮ জনকে কয়েক দফায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা সাতটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা কীভাবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল, সেটা সবাই দেখেছে। তাঁরা জীবন বিপন্ন জেনেও আন্দোলনে মাঠে নেমেছিলেন। অথচ তখন ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছিল। সরকারের নির্দেশে এসব মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও জাসদের করা সাতটি মামলায় আসামি ছিলেন ৩২১ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ছিলেন আরও ১ হাজার ৩০০ জন।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ জুলাই কক্সবাজারে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। ১৭ জুলাই পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন শহরের বাইরে লিংক রোড এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশাল মিছিল লিংক রোড থেকে শহরে প্রবেশ করে। ওই দিন সন্ধ্যায় শহরের ফজল মার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার ত্রিমুখী হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গুলিতে আহসান হাবিব (২৫) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের আছদ আলীপাড়ায়। তিনি চকরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই সময় শহরের লালদিঘির পাড়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও জাসদ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এরপর ৩ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার মিছিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিকবার হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৮২১ জন ছাত্র-বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সাতটি মামলা হয়। মামলায় ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। অধিকাংশ বিএনপি-জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী।

৫ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে লাখো ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে উল্লাস প্রকাশ করে। এ সময় শহরের লালদিঘির পাড়ে জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা জাসদ, সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের মালিকানাধীন হোটেল নীদমহল, সাবেক সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের মালিকানাধীন হোটেল সৈকতসহ নানা স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজিবুল ইসলামের করা একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামি হয়েছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের আইটি কর্মকর্তা এমরান ফারুক অনিক। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার খবর শুনে আবেগাপ্লুত এমরান ফারুক বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছিল। মামলা দায়েরের পর থেকে তাঁকে বেশ কিছুদিন পালিয়ে থাকতে হয়েছে।