সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসে কেউ হারিয়েছে মা, কেউ হারিয়েছে বাবা। এমন ৩০ জন শিশু বেড়ে উঠছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে অরকা হোমসে। ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশনের (অরকা) এই প্রতিষ্ঠানে বসবাস ও থাকা–খাওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে তারা। পড়াশোনা শেষে থাকবে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ওই ঘটনার ১০ বছর হচ্ছে আজ সোমবার।
ওই ঘটনার পরের বছর ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর হোসেনপুর গ্রামে অরকা-হোমস স্থাপিত হয়। গ্রামের নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাপটেন) জাহান ইয়ারের প্রচেষ্টায় এটি গড়ে ওঠে। এরপর সেখানে এসে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেতে শুরু করে বিভিন্ন জেলার শিশুরা। ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিতে শিশুদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ায় সহায়তা করছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
অরকা-হোমস কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলাবিশিষ্ট দুটি এবং প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে উন্নত পরিবেশে ৩০ জন শিশু বসবাস করছে। এর মধ্যে ১৪ জন ছেলে ও ১৬ জন মেয়ে। এই ৩০ জনের বাইরেও আরও ২৭ জন এতিম ছেলেমেয়ে এখানে বাস করে। এসব শিশু লেখাপড়া করছে অরকা–হোমস ক্যাম্পাসে অবস্থিত হোসেনপুর মুসলিম একাডেমিতে। একাডেমিতে প্লে থেকে দশম শ্রেণি রয়েছে। এই একাডেমিতে প্রায় ৪০০ জন ছাত্রছাত্রী ও ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন।
গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দুরে হোসেনপুর গ্রাম। আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকৃতিঘেরা পরিবেশে অরকা হোমস কার্যালয়। ভেতরে আবাসিক ভবন, স্কুল, মসজিদ ও খেলার মাঠ। আবাসিকের ভেতরে পরিপাটি কক্ষ। উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। বিছানা আসবাবপত্র উন্নত। এ বছর ঈদের আগে সবাই নতুন জামা পেয়েছে।
অরকা হোমসে বেড়ে ওঠা রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার খেয়াডাঙ্গা গ্রামের সাগর বলে, ভবন ধসে সে মা জাহানারাকে হারিয়েছে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে তাকে ভরণপোষণ দিচ্ছিল না। তিন বছর ধরে এখানে ভালো আছে। সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। লেখাপড়া শিখে সে প্রকৌশলী হতে চায়।
একই জেলার পীরগাছা উপজেলার অভিরাম গ্রামের আল-আমিন জানায়, ভবন ধসে তার মা ফাতেমা মারা যান। এর আগেই বাবা মারা যান। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এখানে এসেছে। এখন সে দশম শ্রেণির ছাত্র।
অরকা হোমসের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত রফিক মিয়া বলেন, শিশুরা যেন মা–বাবার মতো স্নেহ পায়, সে জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
মেয়েদের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত নুরজাহান বেগম বলেন, মেয়েদের পৃথক ভবনে রেখে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়ে থাকে। সাতজন কর্মকর্তা–কর্মচারী শিশুদের তদারকি করছেন। এখানে বসবাসকারী শিশুদের লেখাপড়া শেষ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে। দুজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুই দিন এখানে এসে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
এই কর্মযজ্ঞের প্রধান উদ্যোক্তা জাহান ইয়ার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়বে।